সারিয়াকান্দিতে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত ফির চেয়ে অন্তত ৫০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, শিক্ষা বোর্ডে যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে এই টাকা নিচ্ছেন তারা। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বলছে, এমন টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই বিদ্যালয়ের। সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পরে ১শ টাকা জরিমানা দিয়ে আরও কয়েক দিন ফরম ফিলাপ করা যাবে। ফরম পূরণে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ২৫৫, মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগে ২ হাজার ১৪০ টাকা। এর বাইরে কোনো ফি নেওয়ার বৈধতা নেই। কিন্তু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তার উল্টো চিত্র পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৭৫৫ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৫ টাকা ফরম ফিলাপ বাবদ। বাকি অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইন ফি, রাজশাহী যাতায়াত খরচ, মডেল টেস্ট, সেশন চার্জসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। উপজেলার কুপতলা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, মথুরাপাড়া আলিনা জাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিকে উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মন্টু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। কুপতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে কথা হয় প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ দুখুর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। তার মধ্যে রোববার (৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৩০ জন ফরম পূরণ করেছে। যারা ফরম পূরণ করেছে তাদের মধ্যে মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ টাকা করে। অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৭৫৫ টাকা।' অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ (দুখু) বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী অফিসার যেহেতু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফরম ফিলাপের নির্ধারিত টাকা ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় টাকা খরচ হয়। সেই জন্য একটু বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে।' বড়ইকান্দির বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আমার বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১৪৫ জন। এর মধ্যে ১২০ জন ইতিমধ্যে ফরম পূরণ করেছে। এখানেও পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এখানে কিছু গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি ফরম ফিলাপ করা হয়েছে।' মথুরাপাড়া আলিনা জাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশাদুল ইসলামের কাছে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানে মোট পরীক্ষার্থী ৩২ জন। এর মধ্যে ২৪ জন ইতোমধ্যে ফরম পূরণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নিয়েছেন ২ হাজার ৬০৫ টাকা হতে ২ হাজার ৭৫৫ টাকা। এলাকার লোকজন বলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন একদম তলানিতে পৌঁছে গেছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মন্টু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, 'উপজেলা প্রত্যক বিদ্যালয়ে ২৬০৫ টাকা ও ২৭৫৫ টাকা নিচ্ছে আমার বিদ্যালয়েও তাই নিচ্ছি।' এসব বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্ধারিত ফি দিতেই তাদের কষ্ট হয়। সেখানে বাড়তি অর্থ দেওয়া এক প্রকার দুঃসাধ্য। কিন্তু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অরুনাংশ বাবু বলেন, 'আমাদের এলাকার লোকজনের আর্থিক অবস্থা একেবারে নাজুক। এছাড়া এখন দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিক তাই সবাই খুব কষ্টে রয়েছে। এখন সরকার নির্ধারিত ফরম ফিলাপের বাহিরে কোনো বেশি অর্থ ছাত্রদের কাছ থেকে নেওয়া একদম ঠিক কাজ হবে না।' সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহারিয়ার রহমান বলেন, 'বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। রাজশাহী বোর্ডে যাতায়াত ও অনলাইন খরচ স্কুল ফান্ড থেকে দিবে এটা কেন ছাত্রদের থেকে নিবে? বিদ্যালয়ের অন্য কিছু পাওনা থাকলে সেটা নিতে পারে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।'