৩২ বছর ধরে অবহেলিত ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ

নেই পর্যাপ্ত ক্লাস রুম ও হোস্টেল অনার্স থাকলেও নেই মাস্টার্স কোর্স

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মো. রজব আলী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
৩২ বছর থেকে অবহেলিতই আছে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ। জাতীয়করণের ৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও, হয়নি কোনো উন্নয়ন, ৬টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও, এখনো চালু হয়নি মাস্টার্স কোর্স, নেই পর্যাপ্ত ক্লাস রুম ও আবাসিক ভবন। এর উপর লেগে আছে শিক্ষক সংকট। ছাত্রী হোস্টেল না থাকায়, নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না নারী শিক্ষার্থীরা। এদিকে কলেজটি এক সময় রাজনীতির সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত থাকলেও, ৩০ বছর থেকে অকার্যকর ছাত্রসংসদ। ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটিতে ১৫টি বিভাগ চালু থাকলেও, অনার্স কোর্স আছে মাত্র ৬টি বিভাগে। এ ৬ বিভাগে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে মোট ১৯০১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া ডিগ্রিতে আছেন ৯৬০ জন এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ১৩০ জন। প্রতি বছর অনার্স থেকে ৪৭৫ জন পরীক্ষার্থী অনার্স শেষ করলেও, মাস্টার্স কোর্স না থাকায় তাদের অন্য কলেজে যেতে হয়। একইভাবে বিএসএস, বিএ, বিএসসি, ইতিহাস বিভিন্ন বিষয়ে সাড়ে ৯শ' শিক্ষার্থীকেও ডিগ্রি শেষ করে এমএ ডিগ্রি অর্জন করতে বাহিরে যেতে হয়। এদিকে কলেজটির পুরনো ভবনটি ছাত্র হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার হলেও, সেখানে মাত্র ১০০ সিট আছে। বসবাস করতে পারে ৮০ থেকে ৮৫ জন। এখনো ছাত্রী হোস্টেল না থাকায় দূর-দূরান্তের ছাত্রীদের বাইরের কোনো ম্যাস বা বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে হয়। এছাড়া কলেজটিতে শিক্ষক-কর্মচারীর পদ ৬০ থেকে ৬৫ জনের থাকলেও নেই কোনো আবাসিক ভবন। এ কারণে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে হয়। তাই শিক্ষকরা এই কলেজ থেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে সারা বছরে লেগে থাকে শিক্ষক সংকট। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটিতে ৫২জন শিক্ষকের পদ থাকলেও, ২৬টিই শূন্য। এর মধ্যে ১১জন সহযোগী অধ্যাপকের পদের মধ্যে ৭টি, ১২জন সহকারী অধ্যাপকের পদের মধ্যে ৭টি, ২৫টি প্রভাষকের পদের মধ্যে ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ৪টি প্রদর্শকের মধ্যে ২টি ও গ্রন্থাগারিক পদও শূন্য রয়েছে। কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী সমাজসেবক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, তিনি কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তিনিসহ কলেজের তৎকালীন শিক্ষকরাও সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে মাত্র ৬টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও এখনো অধিকাংশ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়নি। এবারো তিনি মাস্টার্স কোর্স চালুর জন্য কয়েকবার আবেদন করেছেন। ফুলবাড়ী সরকারি কলেজটি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট উপজেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কলেজটি ১৯৮৯ সালে ৫ নভেম্বর তৎকালীন সরকারপ্রধান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জাতীয়করণের ঘোষণা দিলেও, পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হওয়ায় কলেজটি সরকারি হয়নি। ১৯৯২ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন কলেজটিকে জাতীয়করণ করেন। এক সময় কলেজটি উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজনীতির সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। কলেজের ছাত্র নেতারা এ অঞ্চলের রাজনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচালনা করেন। এই কলেজ থেকে শিক্ষা লাভ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে বিডিআর'র সাবেক মহপরিচালক মে. জে. (অব.) ফজলুর রহমান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান মন্টু, অব. সচিব ও বতর্মান কর্মরত একাধিক সচিব উপ-সচিব, সাবেক মন্ত্রী হাজি মনসুর আলী সরকার ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আলতাব হোসেন বলেন, কলেজটিতে মাস্টার্স কোর্স চালুর পাশাপাশি ছাত্রী হোস্টেল ও শিক্ষক-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা অতিব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও করেছেন।