তিতাসে জীবন সংগ্রামে হার না মানা ৫ জয়িতা
প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
অর্থনৈতিক বা শিক্ষা ও চাকরিতে অথবা সমাজ উন্নয়নে, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে কিংবা সফল জননী হিসেবে এগিয়ে চলা ৫ নারী জীবনযুদ্ধের বাকিটা সময়ে হার মানতে নারাজ। এমনটাই জানালেন, কুমিলস্নার তিতাসে এবারের 'জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ' শীর্ষক কার্যক্রমের সেরা জয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আসমা বেগম, শিরিনা আক্তার, আফরোজা জামান, শিল্পী আক্তার ও খাদিজা আক্তার। মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মের মাধ্যমে তারা এলাকায় হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় গল্প। জন্ম থেকে অদ্যবধি চলমান জীবনের ঘানি টানতে টানতে অনেকটা ক্লান্ত হলেও সফলতার প্রাপ্তি ঘেরা জীবনকে অনেকটা স্বার্থক বলেই অভিহিত করেন এ পাঁচ জয়িতা। কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে তাদের জীবনের নীরব সংগ্রামের ইতিহাস।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী আসমা বেগম জানান, লেখাপড়ার ইচ্ছা থাকলেও এসএসসির পর ইতি টানতে হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সে গাজীপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসার জীবনের অভাব অনটন থেকে রক্ষা পেতে বাবার সহযোগিতায় বাড়িতে বিভিন্ন গবাদি পশুর খামার করেন। কৃষি কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। বর্তমানে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। সেই আয় দিয়েই জীবন অতিবাহিত হচ্ছে।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী শিরিনা আক্তার বলেন, তার বয়স যখন সাত বছর তখন প্রবাসে বাবা মারা যান। তার দুই বছরের ছোট একটি ভাই ছিল। বাবাকে হারিয়ে মা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। মামাদের সহযোগিতায় মা তাদের ভাই-বোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন। জীবনের প্রতিকূলতা কি, তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন। বর্তমানে তিনি একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
সফল জননী নারী আফরোজা জামান জানান, নানা প্রতিকূলের মধ্যে দুই সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন বলে নিজের মধ্যে গর্ববোধ কাজ করছে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছেলে ডা. মোস্তফা জামান ছোট আর ডা. আয়েশা জামান ছোট। জামান এমবিবিএস পাস করে বর্তমানে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে কর্মরত আছেন। মেয়ে আয়েশাও এমবিবিএস পাস করে বর্তমানে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রশাসন এবার তাকে সফল জননী নির্বাচিত করায় তিনি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করা নারী শিল্পী আক্তার বলেন, মেয়েদের জীবন সবচেয়ে বড় অভিশাপ স্বামীর মন্দ কাজ। এটা সমাজ সংসারসহ ছেলেমেয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। স্বামীর চরিত্র আর চলাফেরা ভালো না হওয়ায় তাকে মরিসাসে ৭ বছর ও জর্ডানে ২ বছর প্রবাস জীবনে থাকতে হয়েছে। তারপরও স্বামীর স্বভাব বদলাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত স্বামীকে তালাক দিয়ে নিজেই দুই সন্তানকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। বর্তমানে বাবার বাড়িতে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে সাপ্তাহিক গাউছিয়ার হাটে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি বিক্রি করে তার সংসার চলে।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী খাদিজা আক্তার জানান, তিনি ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এলাকায় কবরস্থানের জন্য ৬০ শতক জমি, মসজিদের খুতবার মিনার স্থাপন এবং একজন নারীকে স্বাবলম্বী করার জন্য দুই শতক জমি দান করেছেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তার স্বামী ছিলেন একজন শিক্ষক, তার অনুপ্রেরণায় তিনিও শিক্ষক হিসেবে এলাকায় অবদান রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা বেগম বলেন, 'পুরুষ শাষিত সমাজের সব বাধা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে জীবন সংগ্রামে নারীরা জয়ী হতে পারে তাই প্রমাণ করেছেন এ পাঁচ জয়িতা। তাদের এ সাফল্য পরবর্তী নারী প্রজন্মকে উৎসাহী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'