কেরু অ্যান্ড কেরু ও জয়পুরহাট চিনিকল

লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই শুরু

প্রকাশ | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:১৭

স্বদেশ ডেস্ক
কয়েক কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করেছে কেরু অ্যান্ড কেরু ও জয়পুরহাট চিনিকল। এর মধ্যে কেরু অ্যান্ড কেরুতে ৬১ কোটি টাকা এবং জয়পুরহাট চিনিকলের ৫৭ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা রয়েছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানিয়েছেন, চিনিকল ইউনিটে ৬১ কোটি ৭ লাখ টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হলো দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চিনিকল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কেরু কোম্পানিতে। গত শুক্রবার বিকালে চিনিকলের কেইন কেরিয়ারে আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের মাড়াই মৌসুম উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড.লিপিকা ভদ্র। এর আগে, কেন কেরিয়ার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, জেলা দায়রা জজ মো. আকবর আলী শেখ, পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান রসায়নবিদ আনিসুল আযম, প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল করিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক। এছাড়া, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কেরু চিনিকলের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নেতারাসহ আখচাষি, সুধীজন, সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। চিনি উৎপাদন কারখানা, ডিস্টিলারি, জৈব সার কারখানা, বাণিজ্যিক-পরীক্ষামূলক খামার ও ওষুধ কারাখানার সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ এ শিল্প কমপেস্নক্সের চিনি কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতভাবে লোকসান গুনে আসছে। সরকারিভাবে চিনির মূল্য বৃদ্ধির কারণে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে কারখানাটি। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিলস হাউজে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে চিনিকলটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এতে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়বে। তবে এলাকায় আখ চাষ ক্রমাগত কমতে থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ চিনিকলটি। চলতি মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৪৫২ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬৫ দিন চলবে এবারের মাড়াই মৌসুম। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে শতকরা ৬ দশমিক ৩৬ ভাগ। প্রতিদিন গড়ে ১১৫০ টন আখ মাড়াই করবে চিনিকলটি। মিল জোনে এবার দন্ডায়মান আখ রয়েছে ৫ হাজার একশ' একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬৪৫ একর এবং চাষিদের ৩ হাজার ৪৫৫ একর জমিতে আখ রয়েছে। চিনিকলের শ্রমিকরা জানান, এ বছর মিলস হাউজের ফিটিংয়ের কাজ ভালো হয়েছে। মিল ভালোই চলবে। ফলে বেশি চিনি উৎপাদন সম্ভব হবে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, 'মাড়াই মৌসুম শুরু করতে চিনিকলের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ মৌসুমে চিনি কারখানায় লোকসান কমিয়ে আনতে সবাই মিলে কাজ করছে। এ ছাড়াও এ মৌসুমে কোদাল দিয়ে আখ কাটার পদ্ধতি চালু করা হবে। এতে কয়েক হাজার টন আখ বেশি পাওয়া যাবে। চিনির উৎপাদনের পরিমানও বাড়বে।' চাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ মৌসুমে আখের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার প্রতিমণ (৪০ কেজি) আখের মূল্য ২৫০ টাকা। তবে চিনির মূল্য বাড়লেও আশানুরূপ হারে আখের মূল্য বাড়েনি। আখের মূল্য আরও বাড়ানোর দাবি চাষিদের। কেরু চিনিকল আখচাষি কল্যান সংস্থার সভাপতি শরীফ উদ্দীন বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে আখচাষিদের এবার দাবি- আখ বিক্রির পুঁজির পরিমাণ বাড়াতে হবে। আখের মূল্য সরাসরি নগদে পরিশোধ করতে হবে। শিওর ক্যাশ বা বিকাশে চাষিরা টাকা নেবে না। ঋণের সার, বীজ, কীটনাশক সঠিক সময়ে দিতে হবে এবং চাষিদের কোটায় পাওনা চিনি উত্তোলনের সময় বাড়াতে হবে। মাড়াই মৌসুম আরও আগে শুরু করতে হবে। আখের দাম নুন্যতম প্রতিমণ ৩শ' টাকা করতে হবে। চাষিদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া টাকা সম্পুর্ণই আখচাষি কল্যান সংস্থায় জমা করতে হবে। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, পর পর তিনবার তিনটি চিনিকলের আখ নিয়ে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই চলছে দোটানার মধ্যে। গত মৌসুমের প্রায় ৫৭ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে দেশের বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট চিনিকলে ২০২৪-২০২৫ আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। এদিন বিকেলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন বিসিআইসি'র সচিব আনোয়ারুল করীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএসএফআইসি'র সিপিই গিয়াস উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মামুন খান চিশতী, চিনিকলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান, জেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, য়ুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, আব্দুল ওহাব, জেলা জামায়াতের আসীর ফজলুর রহমান সাঈদসহ অনেকেই। জয়পুরহাট চিনিকলের ৬২ তম আখ মাড়াই মৌসুম এটি। বিগত বছরগুলোতে আখের দাম ঠিকমত না পেলেও গত মাড়াই মৌসুম থেকে নায্যমূল্যসহ কৃষকরা পাচ্ছেন প্রনোদনা সুবিধা। এ কারণে চিনিকলটি অচলাবস্থা কাটিয়ে পথ খুঁজছে ঘুরে দাঁড়াবার। আগের বছরগুলোতে আখের কম মূল্য নির্ধারণ, মূল্য পরিশোধে চিনিকল কর্তৃপক্ষের গড়িমশিসহ কৃষক হয়রানির কারণে আখের বদলে কৃষকরা ঝুঁঁকেছিলেন বিকল্প ফসল চাষে। তবে গত বছর থেকে চিনিকলটি আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ সঠিক সময়ে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করায় ফের কৃষকরা ঝুঁকছেন আখচাষে। এ মৌসুমে আখের মূল্য বৃদ্ধি করে মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল আখ ৬শ' টাকা দরে বিক্রি করার সু সংবাদ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা কৃষকরা। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আখচাষিরা। এ ছাড়াও কৃষক হয়রানী বন্ধের পাশাপাশি, সুদমুক্ত ঋণ ও কৃষকদের প্রনোদনা সুবিধা এভাবে দেওয়া হলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে এ চিনিকল, এমন দাবি ও আশা আখচাষিদের। জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত দুইবছরের মত এবারও বন্ধ হওয়া শ্যামপুর ও মহিমাগঞ্জ এ দুই চিনিকলের আখসহ জয়পুরহাট চিনিকলে আখ মাড়াই শুরু হলো। এ মাড়াই মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে ৫.৫ আহরণের অনুপাতে ২ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।