চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শিমের বাম্পার ফলন -যাযাদি
শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজি শিম। গ্রাম থেকে শহর এমন কোন ঘর-বাড়ি নেই, যেখানে শীতকালে শিম রান্না হয় না। এবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সেই শীতকালীন সবজি শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতকালীন শিমের জাত 'কার্তিকায়' ভরে গেছে পুরো উপজেলা। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সবুজ-বেগুনী রংয়ের শিম এবং শিম ফুলে প্রকৃতি যেন একাকার।
কনকনে এই শীতের মনোরমে শিমের ফুলে ভরে উঠেছে বাঁশখালীর মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, নদী, নালা, ঘের-ডোবা এবং পুকুরের পাড়। এই মৌসুমে পুরো উপজেলা জুড়েই শুধু ৩৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শীতকালীন সবজি শিম। শিমের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্য থাকায় উপজেলার শিম চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক। এতে বেশি লাভে শিম বিক্রি করতে পারায় শীতকালীন শিম জাত 'কার্তিকায়' স্বপ্ন বুনছেন বাঁশখালীর তিন হাজার কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, 'উপজেলার কালীপুর, চাম্বল, সরল, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বৈলছড়ি, জলদি, শিলকূপ, শেখেরখীল ও পুইছড়ি, গন্ডামারা, কাথরিয়া বাহারছড়াসহ বিভিন্ন এলাকাজুড়ে শুধু শিম আর শিম। তারমধ্যে বাঁশখালীর প্রধান সড়কের দুই পাশের শিম চাষ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। অন্য খেত, ধান ও মাছ ঘের, ধান জমির আইল, ডোবা, নালা, পুকুর পাড়ে চাষ করা হয়েছে শিম চাষ। পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও শুধু শিম আর শিম। অন্যান্য সবজি খেতেও চাষ করা হয়েছে শীতকালীন এই কার্তিকা জাতের শিম। এতে ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা ক্ষেত থেকে প্রতিদিন দফায় দফায় তুলছেন শিম। অন্যদিকে শিম গাছগুলোতে আবারও নতুন করে আসছে ফুল। তাতে চাষিদের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তবে গত দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অন্যদিকে পাইকারী দামে কেজি শিম প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। তবে বাজারে সব থেকে বেশিই শিম বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। শিম চাষ যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ।
উপজেলার শিম চাষিরা জানান, এ বছর তারা চাষ করেছেন কার্তিকা জাত। এতে অন্য বছরের তুলনায় শিমের ভালো ফলন হয়েছে। সঙ্গে দামও অনেক বেশি। পাইকারী ও খুচরা বাজারে চাহিদা থাকায় শিম বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে খুচরা ও পাইকার বাজারে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা মৌসুমের শুরুতে ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে উপজেলার ৩৪০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার কৃষক শিম চাষ করেছেন। এতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০ টন করে ৬ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতেই কার্তিকা জাতের শিম আবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে শিমের বেশ ভালো দাম রয়েছে।
উপজেলার পূর্ব বৈলছড়ির শিম চাষি আহমদ আলী জানান, 'কৃষি অফিসের পরামর্শে কার্তিকা জাতের শিম চাষ করেছি। এতে অন্য বছরের তুলনায় এবার শিমের ভালো চাষ হয়েছে। দামও বেশ ভালো।'
পুঁইছড়ির শিম চাষি আবু বক্কর বলেন, 'আমি ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেশ কিছু সবজি চাষ করেছি। গত বছর বৃষ্টির কারণে বেশ লোকসান হয়েছিল। তবে এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করা শিম বিক্রি করে সে লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠব।'
বৈলছড়ি এলাকার শিমের পাইকার কলিম উলস্নাহ বলেন, মৌসুমের শুরুতে শিমের চাহিদা থাকত আগে। এখন পুরো মৌসুমে শিমের চাহিদা রয়েছে। তাতে যোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও ভালো। প্রতিদিন বাঁশখালী ৮০ থেকে ১০০ টন শিম দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে। এতে কষ্ট হলেও দাম থাকায় লাভের পরিমাণ কিন্তু বেশি। তবে আগেকারদিনের মতো শিমে পোকা না হওয়ায় শিমের চাহিদা বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, এ মৌসুমে বাঁশখালীর ৩৪০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শিম উৎপাদনে শ্রম ও খরচ কম। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চাষিরা শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তা ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।