আড়াইহাজারে ব্রম্নকলী কপির ব্যাপক আমদানী

কালীগঞ্জে অধিক লাভের আশায় শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) ও আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ফসলি মাঠে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হচ্ছে -যাযাদি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে রোপা আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ব্যস্ততা বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকার ফসলি মাঠে এখন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষে মাঠে মাঠে চারা রোপণ করা সবজির পরিচর্যা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন সবজির মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করে জমিকে উপযোগী করে তুলছেন। আবার অনেকে রোপণ করা ফসলকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে ব্যস্ত। শাক-সবজি উৎপাদনে মাঠে মাঠে চলছে কৃষকদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। তাছাড়া উপজেলার কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষমাত্রা ১৪২০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিসের প্রণোদনার পাশাপাশি স্থানীয় কালীগঞ্জ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনও শীতকালীন বিভিন্ন উন্নত জাতের শাক-সবজি বীজ বিতরণ করেছে। উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের মিরাপাড়া এলাকার বর্গা চাষি কাইয়ুম মিয়া (৩৫) বলেন, তার কোনো কৃষি জমি নেই। প্রতি বছর লিজে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি আবাদ করেন। এতে নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মেটানোর পরও বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন। এতে প্রতিবছর তার বেশ টাকা আয় হয়। সেই টাকায় প্রতিবছর নিজের জমি এবং আবাদ বাড়ান। এ ছাড়াও কথা হয় একই মাঠের কৃষক মান্নান মীর (৪০) সহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষকরা লাভজনক ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ার পাশাপাশি শীতকালীন লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় কালীগঞ্জ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন স্থানীয় কৃষকদের শাক-সবজির বীজ বিতরণ করেছে। কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম আরও বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজির বেশ কদর রয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের উৎপাদিত শাক-সবজিতে মিটছে নিজ পরিবারে চাহিদাও। তাই স্থানীয় কৃষক অধিক লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে বেশি ঝুঁকছেন। আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শীতকালীন সবজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'ব্রকলী' কপি। সবুজ রঙের অত্যন্ত পুষ্টিকর এ সবজিটি আড়াইহাজার সদর বাজারে এখন সয়লাব। প্রতি কপি বাজারে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বৃহষ্পতিবার সকালে বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ব্রকলী কপিটি দেখতে অনেকটা ফুলকপির আকৃতি। তবে এর রঙ গাড়ো সবুজ। আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, এ কপি আড়াইহাজারে এখনো তেমনভাবে চাষ করা হচ্ছে না। ঝাউগড়া হটিকালচারে এর চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে উপজেলার কিছু এলাকায় ধীরে ধীরে ব্রকলী কপির চাষ শুরু হয়েছে। দেখতে ফুলকপির আদলে হলেও এর দাম ফুলকপি থেকে অনেকটা বেশি। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফুল কপি ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সে তুলনায় ব্রকলী ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ক্রেতারা জানান, পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সবজিটির মূল্য আরেকটুু কম হলে সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকতো। অনেকেই এ সবজিটি ক্রয় করে খেতে পারতো। কিন্তু সবজিটির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক ভূঁইয়া জানান, দেশের কোন কোন এলাকায় ব্রকলী কপির চাষ হচ্ছে। সেখান থেকে স্থানীয় সবজি ব্যবসায়িরা ব্রকলী সবজিটি আমদানী করে থাকেন। সদ্য বদলী হওয়া আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের সব জায়গায় কম বেশি ব্রকলীর চাষ হচ্ছে। তবে মানিকগঞ্জ, সাভার এবং দক্ষিণ অঞ্চলের বেশ কিছু জেলায় ব্যাপকহারে চাষ করছেন চাষিরা। আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী এবং ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের কিছু কিছু স্থানে মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে ব্রকলীর চাষ হয়ে থাকে।