বগুড়ায় অফিস না করেও বেতন পকেটে

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ৩ বছরে একদিনও অফিস না করে লাখ লাখ টাকা বেতন পকেটে তুলেছেন সেলিম রেজা নামের এক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইসসিপি)। শুধু তাই নয় এই কমিউনিটি ক্লিনিকের বরাদ্দ ওষুধ বিক্রয় করেও লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাত মাথায় থাকার কারনেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। শুধু তাই নয় স্থানীয় বেশকিছু যুবককে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ১ কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় এই নেতাকে স্থানীয়রা আটক করে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখার ঘটনাও রয়েছে। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে পালিয়ে রয়েছেন। বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপাল নগর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন সেলিম রেজা। তার অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সন্ত্রাস বাহিনী। নানা ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ডার ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় গুরুতর অপরাধ করলেও থানায় তার নামে মামলা করতে দেননি প্রভাবশালী নেতারা। এতে করে আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বিগত ৩ বছর অফিস না করেই বেতন তুলেছেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। সেলিম রেজার কর্মস্থল গোপাল নগর ইউনিয়নের চক ডাকাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেষেই। এই ক্লিনিকে পৌছেন যায়যায়দিনের এই প্রতিবেদক। এখানে পৌছাতেই আসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিম হোসেন। তিনি বলেন, গত তিন বছরে ১০ দিনও খুলতে দেখেননি এই ক্লিনিক। সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তি এখানে দায়িত্বে আছেন। এখানে পুরাতন ক্লিনিকটি থাকতে মাসে দু-একদিন দেখা যেতো। কিন্তু নতুন স্থাপনা হওয়ার পর একদিন এসেছিলেন। তবে দুই-তিন পর পর এক ভদ্র মহিলা এখানে আসেন, কিন্তু ক্লিনিক খোলেন না। প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তার বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরি পোস্টে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় এক যুবকের কাছে থেকে কয়েক লাখ টাকাও নিয়েছেন সেলিম রেজা নামের এই ব্যক্তি। এছাড়াও আরও বেশকিছু মানুষের কাছে থেকেও নাকি টাকা নিয়েছেন। স্থানীয় বুলবুলি খাতুন নামের এক নারী বলেন, কয়েক বছর ধরে এখানে কেউ আসে না। অন্য গ্রামের মানুষ ওখানকার ক্লিনিক থেকে ওষুধ পায়। কিন্তু তাদের এখানে খোলেই না। তাহলে এটা দিয়ে লাভ কি। এসব বিষয়ে জানতে সেলিম রেজার মুটোফোনে একধিকবার যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে মহিষুরা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌছে কাউকেই পাওয়া যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ কাদির বলেন, 'সিএসসিপিদের আমরাও চাপ দিতে পারছি না। কারন গত জুন মাস থেকে তাদের বেতন নেই।' ওষুধ দেওয়া হয় কিনা এবং বিগত দিনে বেতন পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিগত দিনে বেতন পেয়েছে। ঢাকা থেকে ওষুধের বাক্স এসে তাদের কাছে চলে যায়। আমরা ওসব দেখি না।' উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবীব বলেন, 'আমাদের সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিকের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি দেখাশুনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।' পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'যদি কোন দোকান খোলা না থাকে তাহলে সেখানে কাস্টমার যাবে কিভাবে। অর্থাৎ আমাদের এফ ডবিস্নউ এ হলো কাস্টমার আর দোকানদার হলো (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার)।'