ঘুরে ফিরে তিন উপজেলায় ১৯ বছর!

তিতাসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা অভিযোগ

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
কুমিলস্নার তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ হোসেন খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ঘুরে ফিরে জেলার দাউদকান্দি, হোমনা ও তিতাস উপজেলায় ১৯ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত আছেন। পতিত সরকারের স্থানীয় এমপির সঙ্গে যোগসাজশে অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানীসহ দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া বদলীর আদেশ হলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মুহুর্তেই বদলী ঠেকিয়ে বহাল থাকেন এই কর্মকর্তা। গত ২৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। অভিযোগে জানা গেছে, ডা. সরফরাজ হোসেন খান ২০০১ সালের ৩১ মে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নাসিমনগরে ২ বছর চাকুরির পর বদলী হয়ে কুমিলস্নায় আসেন। তিনি ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত ১১ বছর ৭ মাস ১২ দিন জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় মেডিকেল অফিসার ও আরএমও পদে চাকুরি করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট পদোন্নতি পেয়ে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ বছর ১ মাস ২০ দিন দায়িত্ব পালন করেন। পরে একই পদে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জেলার তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এভাবে তিনি জেলার দাউদকান্দি, হোমনা ও তিতাস উপজেলায় ঘুরেফিরে ১৯ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত আছেন। অভিযোগে বলা হয়, সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের এক আদেশে গত ২ ডিসেম্বর তাকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান না করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গত ২৪ ডিসেম্বর আদেশটি বাতিল করিয়ে ফের তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে বহাল হন। অভিযোগে আরও বলা হয়, পতিত সরকারের আমলে স্থানীয় এমপির সঙ্গে যোগসাজশে ডা. সরফরাজ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারে দুর্নীতি, পছন্দের ঠিকাদারকে টাকার বিনিময়ে কাজ দেওয়া, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, সার্জিক্যাল কেমিক্যাল ও ফার্নিচার আইটেম সরকারি বরাদ্দকৃত অনুযায়ী না কিনে টাকা আত্মসাৎ, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসের স্বল্পতা দেখিয়ে এবং অধিক রোগীর মিথ্যা তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ এনে টাকা আত্মসাৎ, রোগীদের সিটের চেয়ে অতিরিক্ত ভর্তি দেখিয়ে প্রতিমাসের পথ্যের ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাৎসহ তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নামে-বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ ও বাড়ি-গাড়ি। ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট-পস্নট ও গাড়ি, বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্পে উনার স্ত্রীর নামে পস্নট। অভিযোগে ডা. সরফরাজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারী, ফ্যাসীবাদের দোসর ও সুবিধাভোগী হিসেবে উলেস্নখ করে তার অপসারণসহ অভিযোগের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে ডা. সরফরাজ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে তিনি এখানে কর্মরত আছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমানীত হলে যে কোনো ব্যবস্থা মেনে নেবেন।