হোসেনপুরে 'বিনা চাষে' সরিষা আবাদ সফল

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৯

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
জমি চাষ করতে হয়নি। মাঠে আমন ফসল থাকা অবস্থায় বপন করা হয় বীজ। ধান গাছ কাটার পর চোখে পড়ে সরিষা গাছ। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে 'বিনা চাষে' সরিষা আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে চাষ করে তিন ফসলি ধানি জমি থেকে বাড়তি ফসল হিসেবে বিপুল পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হচ্ছে এখানে। ফলে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন এখনকার কৃষকরা। আরও বৃহৎ পরিসরে এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এ সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতি এখন কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমিতেই বিনাচাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার নান্দানিয়া, নারায়ন ডহর, বর্শিকুড়া, জগদল, গণমানপুরুয়া এলাকায় কোনো রকম জমি চাষ না করেই সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অল্প কদিন বাদেই শুরু হবে সরিষা কাটার কাজ। কৃষকরা জানান, হাল চাষের খরচ না থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ কাটা-মাড়াই করে ফসল ঘরে তুলতে তাদের সম্ভাব্য খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা সরিষার ফলন যদি ৭ থেকে ৮ মণ হয় এবং বর্তমান প্রতি মণ সরিষার বাজার ২ হাজার ৫শ' থেকে ২ হাজার ৮শ' টাকা ঠিক থাকে তাহলে প্রতি বিঘা সরিষা বিক্রয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তাদের লাভ হবে ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। কৃষকরা আরও জানান, বিনা চাষের কারণে একদিকে যেমন খরচ কম হচ্ছে, অন্য দিকে সঠিক সময়ে চাষ করায় বছরে একই জমিতে তিনটি ফসল থেকে আগের চেয়ে দ্বিগুন আয় হচ্ছে। নান্দানিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, আমন ধান কাটার ১৫ দিন আগে ক্ষেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে ওঠে। আরেক চাষি মুনসুর আলম জানান, আমন কাটার পর জমি কাটতে হতে ১০-১২ দিন কেটে যায়। এরপর জমি চাষযোগ্য করতে আরও ১০-১২ দিন চলে যায়। ফলে চাষ করে সরিষা বুনলে সরিষা তুলে আর বোরো আবাদ সম্ভব হতো না। এ ছাড়া বিঘাপ্রতি জমি চাষের খরচও পড়ে যায় হাজার টাকার ওপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে আসছে। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগামীতে অধিকাংশ তিন ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির জানান, 'এখানে আগে এক থেকে দুই ফসল চাষ হতো। ওই সব জমিতে এখন তিন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।'