জরাজীর্ণ হাটহাজারীর সরকারহাট ভূমি অফিস

ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা দখলে থাকলেও ভূমি অন্যের নামে

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

মো. বোরহান উদ্দিন, হাটহাজারী (চাঁদপুর)
হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নস্থ সরকারহাট ভূমি অফিসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। কয়েক দফা সয়েল টেস্ট হলেও ভূমির জটিলতায় হয় না নতুন ভবন। ফলে স্বাধীনতার পূর্বের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে দৈনন্দিন কাজ। দখলে ৫৫ শতক জায়গা হলেও মাত্র ৬ শতকের ওপর সেই জরাজীর্ণ ভবন। বাকি জায়গায় গাছপালা ও রয়েছে পরিত্যক্ত একটি পুকুর। একদিকে অফিসে জায়গা স্বল্পতা, অন্যদিকে কাগজপত্রে নেই নিজেদের মালিকানা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সহকারী ভূমি কর্মকর্তাসহ সাত কর্মচারী গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ভবনের ছাদের পলেস্তারা অনেকাংশ খসে পড়েছে অনেক আগেই। যে কোন মুহূর্তে আবারো খসে পড়তে পারে আর এতে আহত হতে পারেন কর্মকর্তাসহ যে কেউ। দরজা জানালাও আদিযুগের সেই কাঠ দিয়ে তৈরি। দেয়ালগুলো নড়বড়ে। বৃষ্টি হলেই দেয়াল বেয়ে পানি পড়ার চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে আছে। বছর দেড় বছর আগে সয়েল টেস্ট হয়েছে। চলতি মাসেও মেরামতের জন্য লিখিত আবেদন করেছেনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর। আদৌ হবে কিনা নিশ্চিত করতে পারেননি। এ দিকে কাগজপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, ১৯৫০ সালে ১নং খাস খতিয়ান হিসেবে ৫৫ শতক জায়গার মালিক হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগের একোয়ার আর ৭৭/৭৮ সালে বি.এস জরিপে দুই ব্যক্তির নামে নামজারী হয়েছে পুরো জায়গা। যার মধ্যে ২৭ শতক সড়ক ও জনপদ বিভাগের একোয়ার বাকি ২৫ ও ৩ শতক দুই ব্যক্তির নামে নামজারী। তবে এত বছর ধরে নিজেদের জায়গা অন্যের নামে একোয়ার কিংবা নামজারী হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যাথা নেই। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে গ্রাহকদের সেবা অব্যাহত রাখলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভূমির জটিলতায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বারবার নতুন ভবন কিংবা মেরামতের আবেদন করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। জরাজীর্ণ ভবনে কাজ করতে গিয়ে পাঁচ-ছয় বছর আগে নাজিম গনি নামে তৎকালিন ভূমি কর্মকর্তা আহত হয়েছিলেন। সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক বলেন, সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে সমাধানের জন্য তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। অথচ কাগজে কলমে তাদের জায়গা অন্যের হস্তগত। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন পদক্ষেপ নেই। চট্টগ্রামের মধ্যে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভূমি অফিস আছে কিনা জানা নাই। আশা করছি দ্রম্নত এর একটা সমাধান হোক। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ভবনের পশ্চিমাংশ সড়ক ও জনপদ বিভাগ একোয়ার করার কারণে এ অংশে নতুন ভবন করা যাবে না। তবে পুর্বাংশের পুকুরসহ বাকি জায়গা অন্যের নামে বি.এস হলেও তারা কখনো দখল নেওয়া বা ঝামেলা করেননি। কারণ তারাও জানেন এটা তাদের জায়গা নয়। তাই নতুন ভবন নির্মাণে তেমন সমস্যা হবে না। তবে বি.এস সংশোধনী মামলা করার উচিৎ ছিল। সড়ক ও জনপদ বিভাগের হাটহাজারী অঞ্চলের উপ প্রকৌশলী আব্দুলস্নাহ আল নোমান পারভেজ বলেন, ভূমি অফিস তারাও সরকারি দখলে সমস্যা নাই তবে প্রয়োজনবোধে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এ দিকে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুৎফুন নাহার শারমীন বলেন, 'আমি নতুন, এত কিছু জানি না।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ভবন সংস্কারের চেস্টা চলছে। যত দ্রম্নত সম্ভব সড়ক ও জনপদ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বি.এস জরিপে অন্যের মালিকানার বিষয়ে বলেন, এটাও দেখা হবে।