বগুড়া শহরের সঙ্গে উপশহরের যোগাযোগ তৈরিতে চরম অনিহা
প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
মেট্রোপলিট্রন শহরে সাধারণত উপশহর হয়ে থাকে। তবে বগুড়া মেট্রোপলিট্রন না হলেও রয়েছে উপশহর। বিগত সময়ে এই এলাকাটি বিচ্ছিন্ন ও অনুন্নত থাকলেও বর্তমানে বিলাশবহুল এলাকা হিসেবেই পরিচিত। মস্তবড়-বড় বিল্ডিং ও অট্রালিকা গড়ে উঠেছে এখানে। রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলো। কিন্তু বগুড়া মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোটাই নাজুক যে, জরুরী যোগাযোগ কোনভাবেই সম্ভব নয়।
একদিকে বছরের পর বছর ভাঙ্গাচোরা রাস্তার ভোগান্তির যন্ত্রনার অসহ্যতার সিমারেখা ছাড়িয়ে গেছে। এ অতিষ্ঠতা না কাটতেই চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারনে শহরে প্রচন্ড জ্যামের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও চরমে পৌঁছেছে এই এলাকার মানুষগুলোর। এতে করে বিঘ্নতা ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও সরকারি বেসরকারি দপ্তরের চাকুরেদের। বগুড়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখানে রয়েছে বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি মোস্তাফাবিয়া মাদ্রাসা, কাষ্টমস এক্সাসাইজ ও ভ্যাট অফিস, ৪-এপিবিএন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়, হাইওয়ে পুলিশের রিজোওয়ান অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন অফিসের জেলা কার্যালয়, বক্ষব্যধি হাসপাতাল, বালিকা মাদ্রাসা, উপশহর বিদ্যাপিঠ স্কুল, ফকির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তর।
এখানে রয়েছে সরকারি হাউজিং প্রকল্প। বগুড়া হাউজিং এর তথ্য মোতাবেক দেখা যায় ৪০৭ টি প্রকল্পের মধ্যে ১০৬টি, নবসৃষ্ট ২৪টি পস্নটের মধ্যে ১৬টি, ২০টি বানিজ্যিক প্রকল্পের মধ্যে ২০টি, ৪টি প্রাতিষ্ঠানিক পস্নটের মধ্যে ৪টি, ৪০ টি সেমিপাকা বাড়ির ৪০টিরই বরাদ্দ হয়ে গেছে। এছাড়াও ২০১০ সালে প্রকল্পের স্বঅর্থায়নে ১০ তলার পৃথক ৩টি ফ্ল্যাট ভবন নির্মান করা হয়েছে। এই ভবনগুলোর ১৫৫৬ বর্গফুটের ৪৫টি, ১৩৪১ বর্গফুটের ৫৪টি এবং ১২২৪ বর্গফুটের ৩৬টিসহ মোট ১৩৫ ফ্ল্যাটও ইতোমধ্যে বরাদ্দ বা বিক্রি হয়ে গেছে। অর্থাৎ বসবাসের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার সঙ্গে শহরের তেমন কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি।
উপশহর এ এলাকা থেকে শহরে প্রবেশের ২টি পথ রয়েছে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সোজা পথটি নামাজগড়-টিনপট্রি হয়ে বড়গোলা পৌঁছেছে। কিন্তু দিনে-রাতে মস্তবড়-বড় পন্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের জ্যামে আধাকিলো মিটারের রাস্তা পার হতে ১ ঘণ্টাতেও সম্ভব নয়। ২য় রাস্তাটি হাকির মোড় থেকে নুরানী মোড় হয়ে কামারগাড়ী রেলগেট হয়ে শহরে যেতে হয়। কিন্তু এই রাস্তাটি গত ১০ বছর যাবৎ মেরামত না হওয়ায় একেবারেই চলাচলের অনুপোযোগী। এছাড়া সরু একটি পথ ডালপট্টির ভেতর দিয়ে বাদুরতলা হয়ে শহরে পৌঁছাছে। কিন্তু এটি গত দুই বছর ধরে পুলিশের বেরিক্যাডে বন্ধ হয়ে আছে।
হাকির মোড় থেকে নুরানী মোড় পর্যন্ত ৮০০ মিটারের একটি রাস্তার কাজ গত বছর শুরু করা হয়। কিন্তু ডিসেম্বরে এই কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজটি পূর্নাঙ্গরুপে শুরুই করা হয়নি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি সোহেল জেভির সত্বাধীকারী সাহজাহান হোসেন বলেন, পৌরসভার সিদ্ধান্তহীনতার কারনেই এ সমস্যা হয়েছে। কারন কখনো আরসিসি আবার কখনো কার্পেটিং করার নির্দেশনা নিয়ে জটিলাতাসহ আরও বেশকিছু কারনেই এ অবস্থা। তবে দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ শুরু করবেন।
বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশলী রেখা বলেন, ঠিকাদারকে বারবার তাগিত দিলেও তিনি এই কাজের প্রতি কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে দ্রম্নত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ বলেন, শহরের সঙ্গে উপশহরের কানেক্টিভিটি খুবই নাজুক। এটি অনেক বড় একটি পরিকল্পনা, যার কারনে আমরা এটি শুরু করতে পাচ্ছি না। আগামিতে বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।