সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে পোতাজিয়ার নবরত্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ -যাযাদি
আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঐতিহাসিক পোতাজিয়ার 'নবরত্ন মন্দির'। এটি পোতাজিয়ার প্রভাবশালী রায় পরিবারের পারিবারিক মন্দির হিসেবে পরিচিত। পোতাজিয়ার জমিদার চন্ডিপ্রসাদ রায়ের বংশধররা এ 'নবরত্ন মন্দিরটি' প্রতিষ্ঠা করেন বলে ধারণা করা হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী 'নবরত্ন মন্দির' ষোড়শ বা স্বপ্তদশ শতকে নির্মিত হয়েছে বলে জানা যায়। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী আর নান্দনিক পোড়ামাটির কারুকার্য সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করে। কথিত আছে, দিলিস্নর সম্রাট শাহজাহান আরকান জলদসু্যদের শায়েস্তা করতে শাহজাদপুরে এসেছিলেন। তখন তিনি এই নবরত্ন মন্দিরটি দেখে যান। এই মন্দিরের পার্শ্বে একটি উচ্চ মাটির ঢিবি অবস্থিত।
ধারণা করা হয়, মন্দিরটিতে সাধারণ প্রজা হিন্দুরা উপসনা করতে পারতেন না। শুধু রায় পরিবারের পারিবারিক মন্দির হিসেবে এখানে উপাসনা করা হত।
আভিজাত রায় পরিবারের লোকেরা পোতাজিয়ার জমিদারীর পাশাপাশি এই নবরত্ন মন্দিরকেও গড়ে তোলেন প্রাচীন মোঘল স্থাপত্যশৈলী দিয়ে।
বাংলার নবাবী আমল শুরু হলে মন্দিরটি রায় পরিবারের আওতামুক্ত হয়ে সর্বসাধারণের উপাসনার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
কালের পরিক্রমায় রক্ষণাবেক্ষণ আর অযত্ন-অবহেলায় ইতিহাসের নির্মম সাক্ষি এই 'নবরত্ন মন্দির' হারাতে বসেছে তার জৌলুস। চুরি হয়ে যেতে থাকে মন্দিরের ভিতরের আসবাবপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র।
এ অঞ্চলের হিন্দু জমিদার ও হিন্দুরা ভারতে পাড়ি জমানোর কারণে এক সময়ের হিন্দু অধু্যষিত শাহজাদপুরের প্রাচীনগ্রাম পোতাজিয়া সংখ্যালঘু হিন্দুতে পরিণিত হয়।
এরপর এর চারপাশে বসতি স্থাপন করতে থাকে স্থানীয় মুসলমানরা। আর 'নবরত্ন মন্দির' অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে বিভিন্ন গাছ-গাছালি আর লতাপাতায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে।
বর্তমানে মন্দিরটির খন্ডিত একটি অংশ অযত্ন অবহেলায় এখনো মাথা উঁচু করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।
কথিত আছে, নবরত্ন মন্দিরে একসময় প্রচুর বিষাক্ত সাপের আবাস ছিল। এখনও ভয়ে অনেকেই নবরত্ন মন্দিরের কাছে একাকী যেতে সাহস পায় না। তবে মন্দিরের ভিতরে আঙ্গিনায় একটি পরিবার নির্ভয়ে বসবাস করে আসছেন।