বিএডিসি'র ৬০২ কোটির সেচ প্রকল্প

চাষের আওতায় আসবে ১৬শ' একর অনাবাদি জমি

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
কৃষি মৌসুমে পানিবদ্ধতা, আবার কোনো কোনো এলাকায় সেচ সুবিধা না পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পাচ্ছিলেন না। এসব সংকটে রাউজানের শতশত হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকত। কৃষকদের এসব সমস্যা সমাধানে এবার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষকদের পানি সংকট মোকাবেলায় এবার উপজেলায় হাতে নিয়েছে তিনটি প্রকল্প। এ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে 'চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং বর্ষায় পানিবদ্ধতা থেকে ফসল রক্ষা পাবে। ৬০২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএডিসি কাজ করছে চট্টগ্রামের ১৬টি প্রকল্পে। কাজ হবে কক্সবাজারের ৯টি উপজেলায়ও। রাউজানের এই প্রকল্পের মধ্যে কাজ করা হচ্ছে মহেশখালী ও কাশখালী খাল পুনর্খনন, দেড় কিউসেক সোলার চালিত বারিড পাইপলাইন নির্মাণ এবং ৫ কিউসেক বিদু্যৎ চালিত বারিড পাইপ নির্মাণে। বিএডিসি'র প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বোরো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং বর্ষায় পানিবদ্ধতা থেকে এসব জমির ফসল রক্ষা পাবে। এই কর্মকর্তার মতে মাটির নিচে বারিড পাইপ লাইন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি জমির উপড়ে নালা করে পানির সেচ দিতে হবে না। পাইপ প্রবাহিত হবে মাটির সাড়ে তিন থেকে চার ফুট গভীরে। এতে কৃষি জমি নষ্ট হবে না। সোলার প্যানেল পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করায় সেচ খরচও কমবে। জানা যায়, রাউজানে তিনটি প্রকল্পের আওতায় বিনাজুরিতে দেড় কিউসেকের ১২০০ মিটার বারিড পাইপ এবং পৌরসভায় ৫ কিউসেকের ২২০০ মিটার বারিড পাইপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অন্তত ৮০০ কানি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। গত ১৫ জানুয়ারি উপজেলায় বিএডিসির এ তিন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বে থাকা অংছিং মারমা। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়- রাউজানের প্রকল্প কাজ হচ্ছে মহেশখালী এবং কাশখালী খাল পুনর্খনন, ১.৫ কিউসেক সোলার চালিত বারিড পাইপ লাইন নির্মাণ ও ৩. ৫ কিউসেক বিদু্যৎ চালিত বারিড পাইপ নির্মাণের। বিএডিসির এই প্রকল্প নিয়ে কাশখালী খাল পাড়ের কৃষক নুরুল আলম বলেছেন, কাশখালী এলাকাটি মৌসুমী সবজি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। খালের পানিতে এতদিন স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ হয়ে আসলেও সেচ সুবিধা না থাকায় শত শত একর জমি অনাবাদি থেকে যেতো। বিএডিসি এই প্রকল্প বাস্তাবায়িত হলে এলাকার কৃষকরা স্বঃস্ফুত ভাবে চাষাবাদে নামবে। মহেষখালী খাল পাড়ের কৃষকদের একজন অনিল বড়ুয়া বলেছেন পৌর এলাকার বেরুলিয়া, হাজিপাড়া, কাগতিয়া, বিনাজুরি, লেলাংগারাসহ বিভিন্ন বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ করা যেতো না। বিএডিসি নেওয়া প্রকল্পে এসব সমস্যা সমাধান হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা অংছিং মারমা বলেন, সরকার কৃষকদের উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সার বীজ দিচ্ছে। এখন কৃষকদের পানির সংকট মোবাবেলায় বিএডিসি কাজ শুরু করেছে। কৃষকদের এসব সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। এখন থেকে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএডিসির এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে প্রায় ১৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। বর্ষাকালে রাউজান পৌরসভা, রাউজান সদর, বিনাজুরি ইউনিয়নের বন্যাজনিত সমস্যার কারণে সৃষ্ট পানিবদ্ধতা নিরসন হবে। প্রকল্প কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির, উপজেলা সমবায় অফিসার মোহাম্মদ ওবাইদুল হক, বিএডিস্থির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপি নেতা মো আবু জাফর চৌধুরী প্রমুখ।