কলারোয়ায় সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ-চাষিরা নান্দাইলে লাউ চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) ও নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স স্থাপন করেছেন মৌ-চাষিরা -যাযাদি
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ-চাষিরা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন তারা। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশে ও রপ্তানি হচ্ছে। এর মাধ্যমে চাষিরা একদিকে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। পাশাপাশি সরিষা ফুলে মৌমাছি দ্বারা পরাগায়নের ফলে সরিষার বাম্পার ফলন হচ্ছে। আবুল কাশেম নামে একজন কৃষক জানান, এই সরিষা মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে মৌ চাষিরা তাদের উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স স্থাপন করেছেন। এমনি একটি দৃশ্য কলারোয়া-খোরদো রোডের আলাইপুর প্রাইমারি স্কুলের সামনের মাঠে দেখা গেছে। জেলার আশাশুনি থেকে আসা মৌচাষি আমিরুল গাজী বলেন, 'সরিষা ক্ষেত থেকে আমরা বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করি। অন্য আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছি পুষে রাখা হয়। গত বছর মে মাস থেকে গত বছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মৌমাছি পুষতে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। তখন সর্বত্র সরিষার ফুল ফোঁটে।' তিনি আরও বলেন, আকার ভেদে একটি বাক্সে ৩০-৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলোনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলোনিতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। প্রতি কলোনিতে লাভ হয় ৫ হাজার টাকার মতো। এছাড়া, মধু চাষের ফলে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পায় এবং পোকামাকড় আক্রমণ কম করে বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাস বলেন, 'আমরা মধু চাষিদের সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহে উৎসাহিত করে থাকি। এতে সরিষার পরাগায়ন যেমন ভালো হয়, আবার তেলের উৎপাদন বাড়ে। ফলে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হন।' নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের নান্দাইলে শীতাকালীন সবজি লাউ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ভালো ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় খুশি তারা। এতে লাউ চাষ বেড়েছে। কৃষকরা বলেন, 'অন্য সবজির চেয়ে লাউ চাষ লাভজনক।' উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নান্দাইলে ১৩৫ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। অল্প খরচে লাউ চাষে লাভ বেশি, তাই কৃষকেরা লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লাউ চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে লাউ বিক্রি করে থাকেন। পাশাপাশি কৃষকের ক্ষেত ও স্থানীয় বাজার থেকে পাইকাররা লাউ কিনে পিকআপে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের লোহিতপুর গ্রামের কৃষক মো. হুমায়ুন বলেন, 'আমি ৩০ শতক জমিতে লাউ চাষ করে লাভবান হয়েছি। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।' চরলক্ষিদিয়া গ্রামের কৃষক শাবুল বলেন, '৫০ শতক জমিতে আমি লাউ চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।' কৃষক বাবুল, আলম ও কামাল বলেন, 'আমরা লাউ চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। মৌমুসের শুরুতে প্রতি পিস লাউ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন প্রতি পিস লাউ ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করছি। ভালো দাম পাওয়ায় আমরা খুশি।' নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা বলেন, 'এ উপজেলায় শীতকালে প্রচুর লাউ চাষ হয়েছে।কৃষক লাউ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছেন। ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা আমরা দিচ্ছি।'