কুমিলস্নার দেবিদ্বারে বোরো ধানের 'সমলয়ে চাষাবাদে' যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামে রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের সাহায্যে চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি অধিদপ্তর। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১৫০ হেক্টর বোরো ধানের জমিতে রোপণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষকদের চাহিদার ভিত্তিতে জাত হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে ব্রি ধান-১০২ জাতটি মঙ্গলবার সরজমিনে উপজেলার ইউছুফপুর এলাকায় কৃষি মাঠ ঘুরে দেখা যায়,- একদিকে শ্যালু মেসিনে পানি সরবরাহ করে ট্রাক্টরে জমি চাষে উর্বর করা হচ্ছে, অপরদিকে দুইটি রাইস ট্রান্সপস্নান্টার মেশিনের মাধ্যমে অনবরত রোপন হচ্ছে ধানের জমি। এক বিঘা জমির মাটির পানি, চাষ এবং মই শেষে রোপণ করতে সময় লাগছে গড়ে মাত্র এক ঘন্টা। সুবিশাল মাঠের নিজ নিজ জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। একটা জমি শেষ করে চালক প্রস্তুত থাকা অন্য জমিতে ট্রাক্টর ও রাইস ট্রান্সপস্নান্টার মেশিন নিয়ে গিয়ে রোপণ করে চলেছেন ৩০ দিন বয়সের বোরো ধানের চারা।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, আমাদের যান্ত্রিকীকরণের আগে প্রতি বিঘা জমি রোপণ করতে পানি সরবরাহ, হাল চাষে শ্রমিক খরচ হত ৮ থেকে থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা, সময়ও লাগত ২-৩ দিন। আর যান্ত্রিকীকরণে শ্যালো মেশিনে পানি সরবরাহ, ট্রাক্টরে চাষ এবং সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের সাহায্যে রোপণ করলে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৫শ' থেকে ১ হাজার ৭শ' টাকা খরচ হবে। সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা। ধান পাকা শেষ হলে হার্ভাস্টার মেসিনে একসঙ্গে কাটা, মারাই এবং বস্তাবন্দীতেও সময় এবং খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। তার থেকেও বড় কথা প্রয়োজনের সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে শ্রমিক মজুরি দ্বিগুণ হয়ে যায়। যান্ত্রিকীকরণে এ সব দুশ্চিন্তা থেকে আমরা মুক্ত।
ব্রি ধান-১০২ জাতটির বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে বস্নকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক একরের একটি ব্রি ধান-১০২ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করি। জমির ফলন দেখে এ বছর ৫০ একরন জমিতে কৃষকেরা নিজেরাই ব্রি ধান-১০২ চাষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রি ধান-১০২ জাতটি জিংক সমৃদ্ধ; যাতে জিংক এর পরিমাণ ২৫.৫ মি. গ্রাম/কেজি। তাছাড়া, জাতটির অ্যামাইলোজ ২৮% ও প্রোটিনের পরিমাণ ৭.৫%। ফলে এ ধানের চাল চিকন ও সাদা হওয়ার পাশাপাশি ভাত ঝরঝরে হবে। বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ থেকে ২৬ মন ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান-১০২ জাতটি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, মূলত: দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা 'সমলয় চাষাবাদের' বস্নক প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করছি। প্রথমত, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ; বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের ব্যবহারকে জনপ্রিয়করণ, দ্বিতীয়ত, বোরো ধানের নতুন জাত হিসাবে ব্রি ধান-১০২ সম্প্রসারণ। তাছাড়া, রোপনের পর এ ডবিস্নউ ডি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের অভ্যস্ত করতে কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো,- গত বছর কয়েকজন কৃষককে অনেকটা জোরপূর্বক ব্রি ধান-১০২ চাষে উদ্বোদ্ধ করতে হয়েছে। এবার ব্রি ধান-১০২ এর উৎপাদন এবং গুণাগুনে কৃষকরা আগ্রহী বেশী হওয়ায় একই মাঠে প্রায় ৫০ একর জমিতে ব্রি ধান-১০২ চাষ হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য ঘাটতি পুরণে বড় যোদ্ধা হলেন কৃষক। তাই কৃষক এবং কৃষি উন্নয়নে সরকার প্রনোদনায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রেখেছে।