ঢোলকলমি হচ্ছে কনভলভালাসি পরিবারের এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। একসময় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামের পথের ধারে, জলার পাশে, হাওর-বাঁওড়ে সর্বত্র এদের দেখা যেত। গ্রামের সৌন্দর্যের রাণী এই ফুলটি এখন বিপন্ন প্রায়।
গ্রাম-গঞ্জে ঢোলকলমি বেড়ালতা বা বেড়াগাছ নামেও পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে গাছটি 'অমর গাছ' হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছে দৃষ্টিনন্দন ফুল হয়। ফুল দেখতে মাইক, ঘণ্টা বা বেল আকৃতির। রঙ হয় হালকা বেগুনি ও সাদা। কলমি পরিবারের উদ্ভিদ হলেও ঢোলকলমি লতাজাতীয় নয়। ফাঁপা কান্ড নিয়ে ঢোলকলমি বেড়ে ওঠে। ব্রাজিলের আদিবাসীরা এটা তামাকের পাইপ হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া গাছটির কান্ডের একটি বিশেষ গুণাগুণ হচ্ছে এর মাধ্যমে কাগজ তৈরি করা হয়।
কথিত আছে, এই ফুলের আদি নিবাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও বলিভিয়ায়। সেখানকার পাহাড়ি এলাকা থেকে স্প্যানিশ পাদরিরা সপ্তদশ শতকে হিমালয়ের কাশ্মীর ও কাংড়া উপত্যকায় গির্জার বাগানে লাগানোর জন্য এটি নিয়ে আসেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতবর্ষে।
একসময় গ্রাম অঞ্চলে রাস্তার ধারে পাশে দেখা গেলেও এখন সেটি বিলুপ্তির পথে। এখনও রাঙামাটির কিছুকিছু জলেঢুবা ভাসমান এলাকায় এই ঢোলকলমি গাছ দেখা যায়। তবে গ্রাম অঞ্চলে কয়েক দশক আগেও ঢোলকলমি গাছটি প্রায় দেখা যেত। সাধারণ লোকজন বাড়ির আশেপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যও এ গাছটি লাগিয়ে থাকত।
ঢোলকলমি সুন্দর ফুল দেওয়া ছাড়াও আমাদের নানা রকমের উপকারে আসে, জমির ক্ষয়রোধ করে। এটি দ্রম্নত বর্ধনশীল এবং প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে বলে গ্রামাঞ্চলে এই গাছ বাড়ি বা জমিতে বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে। নদীর তীরে কিংবা ফসলের মাঠে ঢোলকলমি বেশি হয় এবং বনের পাখির বসার জায়গা করে দেয় এই ঢোলকমলি গাছটি।
সারা বছর এই ফুল দেখা গেলেও বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ ও শীতে এই ফুল বেশি ফোটে। একটি ডাল কিংবা মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে এবং সেই ফুলের মধু আহরণের জন্য কালো ভ্রমর আসে। তবে এর পাতা ও কান্ড বিষাক্ত এবং কষের রঙ হয় সাদা দুধের ন্যায় তেতো স্বাদের বলে গবাদি পশু এতে মুখে দেয় না। এই উদ্ভিদের কিছু ভেষজগুণও আছে।
উপজেলার মাইনী ইউনিয়নের কৃষক লোকমান ফরায়জি বলেন, এটি খুবই উপকারী। ঢোলকলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গরু-ছাগল গাছটি না খাওয়ায় ফসলের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নদীর তীরে ভাঙন রক্ষায় এটি ব্যবহার হতো। আবার রান্নার জ্বালানি উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তবে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।
তবে জানা যায়, ৯০ এর দশকে ভয়ঙ্কর এক পোকার ভয়ে দেশজুড়ে গাছটি ধ্বংস করার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। গুজব রটে, এই পোকা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কামড় দিলেই মৃতু্য অবধারিত। এমনকি শরীরে লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে।