সারিয়াকান্দিতে গ্রাম পুলিশের দুই বছর ধরে বেতন বন্ধ
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য প্রায় ১১ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অংশের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, যা তাদের বেতনের অর্ধেক। নিয়মিত কাজ করে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া দুই বছর ধরে হাজিরা ভাতাও বন্ধ রয়েছে। বেতনের দাবিতে দলবেঁধে তারা ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু মিলছে না প্রতিকার।
গ্রাম পুলিশ ও ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২ ইউনিয়নে মোট ১১৮ গ্রাম পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে দফাদার হলো ১১২ জন আর মহলস্নাদার হলো ১০৬ জন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী দফাদারেরা প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা ও মহলস্নাদাররা ৬ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। মোট বেতনের অর্ধেক ইউপি থেকে দেওয়া হয়। বাকী অর্ধেক দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু ১১ মাস ধরে ইউপি অংশের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া দুই বছর ধরে তারা প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পাচ্ছেন না। ইউনিয়নগুলোতে প্রতি মাসে চার দিন হাজিরার নিয়ম রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা ধরা রয়েছে। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে এই হাজিরা ভাতার কোনো টাকাই তারা পাননি।
গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা চত্বরে দেখা হয় অর্ধশত গ্রাম পুলিশের সঙ্গে। তারা জানান, বেতনের দাবিতে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ অরুন কুমারের স্ত্রী বুলবুলি রাণি জানান, 'স্বামীর স্বল্প আয়ের জন্য তার সংসার না চলায় তিনি গ্রাম পুলিশে যোগ দেন। প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে তিনি প্রতি মাসের হাজিরা ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ তিনি দুর্গম চরাঞ্চল থেকে এসে অনেক টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে থানায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। অনাহারে অর্ধাহারে তার পরিবারের সদস্যদের জীবন কোনমতে টিকে আছে। টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না।
উপজেলা গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা উপজেলা পরিষদ, ইউপিসহ গ্রাম-মহলস্নায় দিন-রাত কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, কিন্তু বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অনেকে ধার দেনা করে চলছেন।
কর্নিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন বলেন, 'কেউ ঠিক মতো ট্যাক্স দিতে চায় না। পরিষদের দলিলও খুব বেশি হয় না যে তাদের বেতন পরিশোধ করব।'
চালুয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এ বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এই ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেন না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও কিছু কিছু করে বেতন দেওয়া হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি ইউএনও শাহারিয়ার রহমান বলেন, 'আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে চাপ দিচ্ছি, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। তিন মাসের ভাতা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি বেতন-ভাতার বিষয়ে। আর হাজিরা ভাতা সরকারি বরাদ্দ পেলে দেওয়া হবে।