কোটি টাকার সরকারী সম্পদ লুটপাট
শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না রেলপথের ৭ স্টেশনের কোন অস্তিত্ব নেই
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মঈনুল হাসান রতন, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না পরিত্যক্ত রেলপথের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে এ পথটির ৯০ ভাগ রেলপাতসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু তাই নয়, এ পথের ৭টি স্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই।
বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদন্যরা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক, পিকআপসহ প্রায় কোটি টাকা মূল্যের রেলপাত আটক করলেও পাচারকারীরা রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের পরিত্যক্ত এসব সম্পদ লুটপাট বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের অন্ধকারে ট্রাক ও পিকআপ ভর্র্তি করে রেলের এসব সম্পদ পাচার করেছে। রেল পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ফলে অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে পড়েছে এসব সম্পদ পাচাররোধ।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেল লাইনটি বিগত সরকারের আমলে ২০০৩ সালে অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়। তাদের অনেকেই এখন বিলাস বহুল বাড়ি ও গাড়ির মালিক। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর ভয়ে কিছুটা বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলপাত পাচার বেড়ে গিয়েছিল।
১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে বলস্না সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করে। সে সময়ে চুনারুঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা-পাতা রপ্তানী ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথটি। স্বাধীনতার পর এ লাইনটি লোকসানের পথে এগোতে থাকলে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম দিকে এ লাইনটি সর্বপ্রথম অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়। এর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে একবার ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।
এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ- বালস্না রেল লাইনের প্রায় ৩৬ কিলোমিটার সড়কের রেলের পাত, পাথর, সিগ্যানাল, তার, নাট বল্টু ও ওজন মাপার যন্ত্রপাতি এবং ৭টি স্টেশনের অবকাঠামোসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়ে যায়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনী উপজেলার বগাডুবি, ইনাতাবাদ, আমুরোড, নোয়াবাদ, বনগাঁও ও ঘনশ্যামপুর গ্রামের কয়েক নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ রেলের পাত ও পাত কাটার যন্ত্র উদ্ধার করে। এ সময় তারা অনেককে আটক করে।
সরজমিনে দেখা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার বালস্না আমুরোড, বগাডুবি হয়ে ইনাতাবাদ, সতং, শাকির মোহাম্মদ, বড়কোটা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত রেল লাইনের প্রায় ৯৫ ভাগ নেই। এ অবস্থায় প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশই এখন রেল পাতবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে।
কোন কোন স্থানে রেল লাইনের কোন অস্তিত্বই নেই। এছাড়া বালস্না থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত ৭টি রেল স্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর বিদ্যমান নেই। পরিত্যক্ত রেল স্টেশনগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ ও গরু ছাগলের ঘরে রুপ নিয়েছে।