সূর্যমুখি ফুলের কৃষি খামার এখন বিনোদন কেন্দ্র

খামার জুড়ে হাজারো মানুষের ভিড়

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
দেশে গড়ে তোলা সূর্যমুখি ফুলের খামার ও বাগান যেন এখন বিনোদন কেন্দ্র। সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে খামার ও বাগানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় বাড়ছে। ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাই বাগানে প্রবেশে জুড়ে দিচ্ছে নানা শর্ত। তবু দল বেধে মানুষ আসছেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। প্রতিনিধিদের পাঠানো থবরে বিস্তারিত- মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, কৃষি খামার জুড়ে হাজারো মানুষের ভিড়। খামারে উৎপাদিত সূর্ষমুখি ফুল দেখতে এখন ভিড় করছেন ফুল প্রেমীরা। কয়েক বছরের ব্যাবধানে মেহেরপুরের আমঝুপি বিএডিসি কৃষিখামার এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দল বেঁধে বন্ধু-বান্ধবী কেউ বা পরিবার পরিজন নিয়ে সূর্যমূখী ফুলের বাগানে সেলফি তোলায় ব্যাস্ত। প্রকৃতির এই আবিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমী তরুণ-তরুনীরা। মানুষের ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বছর জুড়ে নানা ধরনের সবজির বীজ উৎপাদন হয়ে আসছে আমঝুপি বিএডিসির সবজি বীজ ফার্মে। এরই ধারাবাহীকতায় সূর্যমূখীর তেল বীজের চাহিদা পূরনের জন্য এই চাষের উদ্দ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছরে ওই কৃষি খামার ফুল প্রেমিদের পদচারনায় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মেহেরপুরসহ আশপাশের কয়েক জেলার মানুষ প্রতিদিন ভিড় করছেন সূর্ষমুখি বাগানে। পরিবার পরিজন, তরুন-তরুনী সহ নানা বয়সের মানুষ কিছুটা সময় বিনোদনের জন্য ছুটে যাচ্ছেন স্থানটিতে। খামারে দু'চোখ যতদূর যায় শুধু ফুলের সমারোহ। এ যেন হলুদ আর সবুজের মিলন মেলা। দিন দিন বিনোদনের স্থানগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে বিনোদন থেকে। কিন্তু নতুন করে প্রকৃতির মাঝে এমন সৌন্দর্য্য পরিবার পরিজন নিয়ে দেখতে এসে খুশি দর্শনার্থীরা। ফ্রেম বন্দি হচ্ছেন মুহুর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে। পাহপরাদাররা জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সমগম হয় এখানে। শুক্রবারে ১০ হাজার লোকের ভিড় হয়। তারা ৪ জন পাহারায় থেকেও ফুল রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন। তারপরেও কেউ যেন কষ্ট না পায় সেভাবে দেখাশুনা করেন। দর্শনার্থীদের কাতারে ফুল দর্শনে আসা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ জানান, মেহেরপুরের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। জেলায় তামাক উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর তেল পেতে এখন সূর্যমূখির উৎপাদন বাড়িয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া জরুরী। ফার্মের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, সূর্যমুখি উৎকৃষ্টমানের তেল ফসল। সারা বিশ্বে সূর্যমুখি ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এই তেলে লিউনেলিক এসিড আছে, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। সূর্যমুখি বাগান দেখতে প্রতিদিন হাজারও মানুষ আসছে। কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জে সূর্যমুখী ফুলের একটি বাগান দেখতে দর্শনার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। শুরুতে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা থাকলেও প্রতিদিন লোক সমাগম বেশি হওয়ায় বাড়িয়ে প্রবেশ মূল্য করা হয় ৩০ টাকা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন টিকেট দিয়ে বাগানে আনলিমিটেড সৌন্দর্য উপভোগ করা গেলেও এতে বাগানের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। কারণ তৈল জাতীয় ফসল হিসেবে সূর্যমুখীর চাষ করা। সূর্যমুখীর তেলে কোলেসটোলের কম থাকে এবং এটি স্বাস্থের জন্য ভাল হলেও ইদানিং বাণিজ্যিক এ ফসলটিকে অতিরিক্ত বানিজ্যের আশায় মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের সাওরাইদ গ্রামে একটি সূর্যমুখী ফুলের বাগান। বাগানের পাশেই বড় করে একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে 'অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা'। প্রবেশমুখের অপর একটি সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে 'ফুল ছিঁড়লে জরিমানা ২০০ টাকা, ও গাছ ভাগলে জরিমানা ২০০ টাকা'। সাওরাইদ গ্রামে সূর্যমূখী অন্তভুর্তির মাধ্যমে প্রচলিত দ্বি-ফসলী শস্য বিন্যাসকে তিন শস্য বিন্যাসে উন্নয়নের লক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) রাইস ফামিং সিস্টেমস বিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নেয়। রবি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ওই গ্রামের ১২ জন সহযোগী কৃষককে নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। কৃষকরা বিনামূল্যে বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। বাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগানের ছবি দেখে জেলার আশপাশের লোকজন সূর্যমুখী বাগানে ছুটে এসেছেন এবং ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত, আপস্নুত হচ্ছেন তারা। বাগান তত্ত্বাবধায়করা জানান, সূর্যমূখী বাগানে প্রবেশে জনপ্রতি ৩০ টাকা নেওয়া নির্ধারিত থাকলেও সময়ের ব্যাপারে কোন নির্ধারিত সময় দেওয়া নেই। লোকজনকে সামাল দিতে প্রতিদিন চার থেকে সাতজন লোক এখানে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে চলে বিকাল ৬টা পর্যন্ত। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, তৈল জাতীয় ফসলের আশায় সূর্যমুখীর বাগান করলে সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ উন্মুক্ত করা উচিত নয়। এতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় বাগানের মাটি শক্ত হয়। আর তাতে গাছ ঠিক মত নিউটেশন নিতে পারেনা এবং ফুলটাও বড় হয় না।