ভোলায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় জেলেশূন্য মেঘনা ও তেঁতুলিয়া

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

নুরে আলম ফয়জুলস্নাহ, ভোলা
মাছ শিকারের উপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় ভোলায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলারা -যাযাদি
ভোলার ইলিশ অভায়াশ্রমের কারণে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলো মিটার এলাকায় সব ধরণের মাছ শিকারের উপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা সফল করতে রাত থেকেই নদীতে মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ড নিয়োমিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন জেলে আটক ও জাল জব্দ হয়নি। ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল এলাকার জেলে মো. আকবর মাঝি জানান, ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার জন্য তারা ইতোমধ্যেই নদী থেকে ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। জাল গুছিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। দুই মাসের জন্য আর নদীতে মাছ শিকার করতে যাবেন না। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও নদীতে মাছ শিকার করতে নামবেন তারা। একই এলাকার হেলাল মাঝি ও নূরন্নবী মাঝি জানান, নিষেধাজ্ঞার দুই মাস আমরা বেকার সময় পার করি। এসময় সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা চালাতে অনেককষ্ট হয়। সরকার দুই মাসের অভিযান সফলভাবে করতে হলে আমাদের জেলেদের নামে চাল আগের চেয়ে বেশি দিতে হবে। এবং চালের সঙ্গে নগদ অর্থ দেওয়ারও দাবি করে তারা। ভোলার সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের তেতুলিয়া নদীর জেলে সিকান্দার মাঝি জানান, তারা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে জাল ও ট্রলার তৈরি করেছেন। দুই মাস তাদের কোন আয় ইনকাম নেই। এখন কিস্তি চালাবেন কেমনে। তাই সরকারের কাছে আমরা দুই মাসের জন্য জেলেদের কিস্তি আদায় বন্ধের দাবী করছি। সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মেঘনা নদীর জেলে মো: কামাল মাঝি ও হরুন মাঝি জানান, ২০ বছর ধরে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা পরিচালনা করছেন। কিন্তু তাদের এখনও জেলে কার্ড হয়নি। আমরা সরকারের কাছে দাবী করছি প্রকৃত জেলেদের সবাইকে সরকারিভাবে নিবন্ধন করার জন্য। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেদের নামে চাল ২৫ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৪০ কেজি ও ৪০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কেজি চাল করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চালের সঙ্গে ডাল ও তেল বিতরণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এবং হাল নাগাতের মাধ্যমে প্রকৃত জেলেদের নাম নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ভোলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, ইলিশের অভায়াশ্রমের কারণে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার মেঘনার ৯০ কিলোমিটার ও তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরণের মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা সফল করার জন্য আমরা সব ধরণের প্রস্ততি নিচ্ছি। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল আগামী ৭ মার্চ থেকে চাল বিতরণ শুরু করে ১০ মার্চের মধ্যে বিতরণ কাজ সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও জেলেদের ঋণের কিস্তি আদায় ২ মাসের জন্য বন্ধের বিষয়ে তারা আলোচনা করা হবে। ভোলার সাত উপজেলা সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন। এরমধ্যে এবছর ৪০ কেজি করে চাল পাবেন ৮৯ হাজার ৬০০ জন জেলে।