বগুড়া বাস মালিক সমিতির অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই বগুড়া ছাড়া হন আওয়ামী লিডাররা। সেই সুত্রেই বগুড়া বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আক্তারুজ্জামান ডিউক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে যান। তখনই শুরু হয় পদ ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব। এতে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই নিজেদের স্বার্থ বাগিয়ে নিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য লিখতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে তারা। এতে আরও অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হিমসিম খায়। বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এডিএমকে প্রধান করে একটি সমঝোতা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি মিমাংসার জন্য নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এখানেও। কারন বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির রয়েছে দুইটি কমিটি। একটি শ্রম দপ্তরের অধীনে, আর অন্যটি বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে কমিটির সভাপতি বগুড়া জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)। অন্যদিকে শ্রম দপ্তরের অধীনে কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারি এরশাদ। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও এরশাদুল বারিকে মাইনেস করার জন্য ফজলুর রহমান তালুকদার ও আব্দুল জলিল বাকি একটি গ্রম্নপ তৈরি করে। দ্বন্দ্ব শুরু হয় এখান থেকেই। বর্তমানে ফজলুর রহমান তালুকদুার বগুড়া শহরের রাজাবাজারে অবস্থিত বাস মালিক গ্রম্নপ অফিসেই বসেন। অন্যদিকে এরশাদুল বারি এরশাদসহ তার লোকজন বগুড়া চার মাথা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সংলগ্ন অবস্থিত অফিসে বসেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারি বলেন, '৫ আগস্ট পরবর্তীতে একটি সাধারণ সভায় ফজলুর রহমান তালুকদারের প্রস্তাবেই আমাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এতে ওই হাউজের কারোই দ্বিমত ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তার নানা অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নিজেদের মন মতো আব্দুল জলিল বাকিকে সাধারণ সম্পাদক করে তারা একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে মালিক সমিতি। কারণ মালিক সমিতির কার্যালয় বগুড়া ৪ মাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মেঘাসিটিতে। কিন্তু ফজলুর রহমান তালুকদের কমিটির অফিস দেখানো হচ্ছে বগুড়া শহরের রাজা বাজারে অবস্থিত বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রম্নপের অফিসকে। মূলত ওই কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)। তাহলে ফজলুর রহমান তালুকদার আমাদের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়ে ওই অফিসে বসেন কেনো। বিষয়টি একেবারেই পরিস্কার।' এ বিষয়ে ফজলুর রহমান তালুকদার বলেন, 'একটি সাধারণ সভা হয়েছিল সেখানে সবাই ছিলাম আমি এরশাদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করার বিষয়টাও কিছুটা সঠিক। কিন্তু আমার যে স্বাক্ষরটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি নকল। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি। তাহলেই এসবের সমাধান হবে।' বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, এসব দ্বন্দ্ব নিরসন হবে একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে। দ্রম্নত সময়ে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন দেওয়ার জোর দাবি তাদের। শ্রম দপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আমিনুল হক বলেন, 'বর্তমানে এ পরিস্থিতি নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছিল। তার একটি প্রতিবেদনও আমরা পেয়েছি। এখন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, নির্বাচনের মাধ্যমে যারা বিজয়ী হবে তারাই আগামিতে নেতৃত্ব দেবেন।' বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, 'বিষয়টি নিরসনে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। দ্রম্নত সময়ে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে এটার সমাধান করা হবে বলে আশা করছি।'