ঈশ্বরদীর মহাসড়কে মাসোহারায় চলছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
সরকারী নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বাৎসরিক প্রায় দেড় কোটিরও অধিক টাকা মাসোহারা গ্রহনের মাধ্যমে পাকশী হাইওয়ে থানার ওসি এবিএম মেহেদী মাসুদ, সার্জেন্ট আতিক ও এ এসআই সাজেদুল মিলে ঈশ্বরদীর মহাসড়ক গুলোতে অবাধে চালাচ্ছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার। ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া মোড় হতে দাশুড়িয়া-পাবনা, দাশুড়িয়া-কুষ্টিয়া এবং দাশুড়িয়া-বনপাড়া মহাসড়কে অবাধে চলছে এসব নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার। মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে সবুজ সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা, ভ্যান, কুত্তাগাড়ী, নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভুডভুডি ইত্যাদি। মহাসড়ক জুড়ে অবাধে চলছে এসব যানবাহন। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মহাসড়কে যত্রতত্র স্ট্যান্ড বানিয়ে পুলিশের সামনেই দুরপালস্নার যানবাহন চলাচলে তৈরী করছে প্রতিবন্ধকতা। তবে নিষিদ্ধ এসব যানবাহনে পুলিশ কর্তৃক আইনানুগ কোন ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। সেই সাথে ঈশ্বরদী অঞ্চলের মহাসড়ক গুলোতে দূর্ঘটনা বেড়েছে কয়েকগুন। সিএনজি ও অটোরিক্সার লাইন ম্যান সূত্রে জানা যায়, দাশুড়িয়া হতে পাবনা, বনপাড়া এবং কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী মোট সিএনজির সংখ্যা প্রায় ৯০০, অটো রিক্সার পরিমান ৭৫০, কুত্তা গাড়ী ৪০০, চার্জার ভ্যান ও রিক্সা, ৭০০, নসিমন ৩৪৫, করিমন ২৮০, আলমসাধু ৫০০, ভুডভুডি ১৫০, লেগুনা ১৭৫ টি। আকার ও ধরন ভেদে প্রতিটি গাড়ী থেকে মাসিক ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা আদায় করেন পাকশী হাইওয়ে থানা পুলিশ ও তাদের নিয়োগকৃত সহযোগীরা। সরেজমিনে দাশুড়িয়া ট্রাফিকমোড় এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, দাশুড়িয়া গোল চত্ত্বর এলাকা জুঁড়ে তিনটি থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড রয়েছে। যেগুলো থেকে দাশুড়িয়া-কুষ্টিয়া, দাশুড়িয়া-পাবনা এবং দাশুড়িয়া-বনপাড়া/নাটোর মহাসড়কে চলাচলের জন্য যাত্রী উঠানো হয়। এসব অবৈধ থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ডের দখলে মহাসড়কের অর্ধেক। ফলস্রুতিতে দুর পালস্নার গাড়ী গুলোকে প্রায়ই নানা অপ্রীতিকর অবস্থায় পরতে হয়। এছাড়া বেশির ভাগ সময়ই রাস্তা গুলোকে পুরোটা দখল করে রাখে এসব অবৈধ থ্রি-হুইলার। ফাঁড়ি পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে বলে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না এসব অবৈধ গাড়ী চালকরা। কুষ্টিয়া ষোল দাগের সিএনজি দালাল মাসুম বলেন, দাশুড়িয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মধ্যে চলাচলকারী সিএনজির মাসোহারা পাকশী হাইওয়ে থানার ওসি এবিএম মেহেদী মাসুদকে আগে দিতাম। তবে এখন আমি দালালি ছেড়ে দিয়েছি। এখন ওসি সাহেবকে টাকা দেন ভেড়ামারা এলাকার দু'জন দালাল। মাছের গাড়ী বিটের রানা ওরফে মাছ রানা বলেন, আমি কয়েকটি মাছ টানা গাড়ী দেখভাল করি। সেজন্য এ মাসেও ফাঁড়ি পুলিশকে টাকা দিয়েছি। টাকা ছাড়া রাস্তায় চলা যায় না। রাস্তায় চলতে হলে ফাঁড়ি পুলিশকে টাকা দিয়েই চলতে হবে। কুষ্টিয়া,ভেড়ামাড়া, বলবাড়ি, কাচারি, তারাগুনিয়া,আলস্নারদরগা অঞ্চলের সিএনজি মাসোহারা চক্রের দালালরা যথাক্রমে জুয়েল, নাজমুল, লিটন, সাগর মাস্টার, প্রায় শতাধিক গাড়ির জন্য এ অঞ্চল থেকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার লিটন জানান, আমি গাড়ীর ব্যবসা করি সেই সুত্রে তাদের সাথে (ফাঁড়ি পুলিশ) ভালো সম্পর্ক আছে। মাঝে মধ্যে আমার গাড়ী ধরলে পুলিশের সাথে কথা বললে তারা গাড়ীগুলো ছেড়ে দেন এই আর কি। ব্যাটারী চালিত অটোর দায়িত্বে থাকা মুসা জানান, আমার অনুরোধে পাকশি হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশ আমাকে ১৫টি অটোর অনুমতি দিয়েছে। আমি এগুলো নিয়েই আছি। মাসোহারার কথা বললে তিনি জানাবেন বলে তার সাথে স্বাক্ষাত করতে বলেন। জানতে চাইলে মাছের গাড়ী থেকে মাসোহারার টাকা সংগ্রহকারী সার্জেন্ট আতিক জানান, আমি পাকশী পুলিশ ফাঁড়িতে অল্প কিছুদিন হলো জয়েন করেছি। আমি কারো থেকে কোন প্রকার অর্থ সংগ্রহ করিনা। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জানতে চাইলে হাইওয়ে বগুড়া সার্কেলের এ্যাডিশনাল এসপি আবুল হাশমি বলেন, দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড় চত্ত্বরের সকল থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড অবৈধ। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চালানো পুরোটাই দন্ডীয় অপরাধ। মাসোহারার বিষয়ে এর আগে আমরা কাজ করেছিলাম। তেমন সাড়া পায়নি। তবে মাসোহারার বিষয়ে সিনিয়র অফিসারদের সাথে কথা বলে ওসির বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।