শিবচরে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ চাষিরা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
সময় এখন ফাল্‌গুনের প্রথম প্রহর। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এখন কালোজিরার হালকা নীলাভ ফুলের দখলে। ফসলের মাঠজুড়ে অপরূপ সৌন্দর্য, চারদিকে ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের হলুদের সমারোহ। যেদিকে তাকাই মনে হয় যেন হলুদ চাদরে ঢেকে আছে ফসলের মাঠ। এই ফুলকে উপলক্ষ করে জমিগুলোর পাশেই বসানো হয়েছে সারি সারি মৌবাক্স। ফুলের পাপড়ির মাঝে রেণু থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি, আর মৌচাষিরা ব্যস্ত মৌবাক্সের পরিচর্যা আর মধু আহরণে। একদিকে ঔষধী গুণসম্পন্ন হওয়ায় কালোজিরার মধুর ভালো দাম পাচ্ছেন মৌচাষিরা, অন্যদিকে জমির পাশে মৌবাক্স বসানোয় ফলন হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে খুশি স্থানীয় কৃষক ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌচাষিরা। শিবচর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১৩০ জন মৌচাষি মোট ২ হাজার ৯৮৫টি মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৬৮০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও শর্ষেচাষি উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন। মধু চাষের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন বাড়তি আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা বা কালোজিরা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৮ থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর এর ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। জমা করে আবার বের হয়ে যাচ্ছে মধু সংগ্রহ করার জন্য, তারা বিরামহীনভাবে চালাচ্ছে তাদের এই মধু আহরণের কর্মযজ্ঞ। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা। সন্যাসীর চর এলাকায় মৌচাষি সোহাগ সরকার মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন সাতক্ষীরা এলাকা থেকে। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ১৫০টি বাক্স বসিয়েছি। এসব দেখাশোনা করতে ২ জন শ্রমিক কাজ করছে। আমার খামারে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি করে মধু পাচ্ছি। কালোজিরার মধুর প্রচুর চাহিদা। আমরা এই মধু খুচরা সাড়ে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এক মাস এখানে থাকব। পাইকারিতে মধু সরাসরি কয়েকটি কোম্পানিতে দিয়ে থাকি। স্থানীয় কৃষক বাবুল মোলস্না বলেন, আগে যখন মৌচাষিরা আসতো তাদের জমিতে বসতে দিতাম না। আমরা আসলে বুঝতাম না জমির পাশে মৌ বাক্স বসালে ফলন ভালো হয়। আমরা মনে করতাম মৌমাছিরা ফসল নষ্ট করে ফেলে। তবে এখন আমরা বুঝি, তাই মৌ চাষিদের এখানে মধু সংগ্রহ করতে দিই। জমির পাশে মৌবাক্স বসায় জমিতে ফলন ও ভালো হচ্ছে। শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, মৌমাছি ফুলে ঘুরে ঘুরে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে ফুলে সহজে পরাগায়ণ ঘটে। ফলে ফলনও বেশি হয়। পাশাপাশি মৌচাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন। এ ব্যাপারে সরিষা, কালোজিরা চাষি ও মৌবাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছে।