'পাহাড়খেকো' জসিম শিবির ও ছাত্র দলকর্মী হত্যা মামলার আসামি

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

চট্টগ্রাম বু্যরো
'পাহাড়খেকো' হিসেবেই পরিচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। কিন্তু শুধু পাহাড়কাটা নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলকর্মী ওয়াসিম আকরাম ও শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত হত্যাসহ মোট দেড় ডজন মামলার আসামি তিনি। শুক্রবার সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই নগরের ষোলোশহর ও মুরাদপুর এলাকায় জসিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় সেদিন ছাত্রদলকর্মী ওয়াসিম আকরাম, শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হামলায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।' সাবেক কাউন্সিলর জসিম 'শিবির ও ছাত্রদলকর্মী হত্যা মামলার আসামি' উলেস্নখ করে আমিরুল ইসলাম বলেন, 'গ্রেপ্তার জসিম জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে, যা আমাদের তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা আছে ২টি, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ৩টি, চাঁদাবাজির ২টি, দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনালে একটি, বিস্ফোরক আইনে ২টি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে ২টি মামলা আছে। এছাড়া, অন্যান্য ধারায় মামলা আছে আরও ৬টি।' বিভিন্ন সংবাদপত্র শিরোনাম করেছে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তার ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে ছাড়াতেই তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে আমিরুল বলেন, 'এটা হাস্যকর স্টেটমেন্ট। আমি নিজে সেখানে ছিলাম। তিনি আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তিনি ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ছিলেন। ওই বাসা থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।' গ্রেপ্তার জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত। চট্টগ্রাম নগরে 'ভূমিদসু্য' এবং 'পাহাড়খেকো' হিসেবে জসিমের কুখ্যাতি রয়েছে। তিনি সরকারি খাস জায়গা, রেলওয়ের জায়গা দখল থেকে শুরু করে পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছিলেন নিজের ত্রাসের রাজত্ব। নিজস্ব বাহিনী দিয়ে পাহাড় কেটে বানিয়েছেন আবাসিক পস্নট, করেছেন বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ। গত ১৬ ফেব্রম্নয়ারি রাতে কাউন্সিলর জসিমের খোঁজে নগরীর আকবর শাহ থানার এ কে খান মোড়ে 'গ্রীন গুলবাহার টাওয়ার' নামে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবন ঘিরে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। রাতভর ভবনটির প্রতিটি ফ্ল্যাটে তলস্নাশি চালিয়েও জসিমকে তারা খুঁজে পাননি। পরদিন দুপুরে ডবলমুরিং থানা পুলিশ ওই টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে আবারও অভিযান চালিয়ে জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছিল। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নগরের আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে গেলে জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। তারা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোড়ে ও হুমকি দেয়। এ ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আকবর শাহ থানায় জসিমসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে জহুরুল আলম জসিমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। এছাড়া, পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে। একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জসিমকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে, মাসখানেকের মধ্যেই আবার তিনি পদ ফিরে পান।