পাবনার ঈশ্বরদীতে মুকুল শূণ্য লিচু গাছ -যাদি
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্মৃত এলাকার ৩ হাজার ১০০ একর জুরে চাষ হয় রসালো এবং সুস্বাদু ফল লিচু। ৮০ দশকে এ অঞ্চলের মানুষ প্রথমে শখের বসে শুরু করলেও বর্তমানে লিচুর চাষ করছে বাণিজ্যিকভাবে। পুরো উপজেলা জুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে মোট লিচুর বাগান রয়েছে ১১ হাজার ২৭০টি। গতবছর এ এলাকায় উৎপাদিত মৌসুমি লিচুর বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। তবে এ বছর গাছে মুকুল না আসায় অর্ধেকেরও কম ফল পাওয়া যাবে বলে ধারনা করছেন এ এলাকার মৌসুমি লিচু চাষিরা।
উপজেলার লিচু চাষিদের ভাষ্যমতে, বছরের মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সাধারণত লিচুর মুকুল ফোটা সম্পন্ন হয়। যে গাছে মুকুল না আসে সে গাছ গুলোতে ফাল্গুনের শুরুতেই নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। আর যে গাছে মুকুল আসে সে গাছে মুকুলে ছেয়ে যায়। ঈশ্বরদীতে মূলত ৩ জাতের লিচুর চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এগুলোর মধ্যে মোজাফ্ফর বা দেশী, বোম্বাই বা চায়না-৩ অন্যতম। তবে বর্তমানে বেশ কিছু কদমি, কাঁঠালি, বেদানা, চায়না-১ এবং চায়না-২ জাতের লিচুর চাষ হচ্ছে এ অঞ্চলে। তবে চায়না-৩ জাতের লিচুর স্বাদ ও চাহিদা সবচে বেশী থাকার কারনে বর্তমানে এ অঞ্চলে এই জাতের লিচুর চাষ বাড়ছে।
উপজেলার চরমিরকামারী, গাংমাথাল, জয়নগর, নওদাপাড়া, ভাড়ইমারী, সিলিমপুর, আওতাপাড়া, জগন্নাথপুর, শেখের দাইড়, মুন্নার মোড়, বক্তার পুর, কদিম পাড়া, মানিক নগর, ছিলিমপুর এলাকা গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ গাছেই নতুন পাতায় ছেয়ে গেছে। সামান্য কিছু গাছে নাম মাত্র মুকুলের দেখা মিলছে। যা শতকরা ৩০ শতাংশ হবে বলে ধারনা করছে বাগানিরা।
নওদাপাড়ার জসীম উদ্দীন বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর মুকুর অনেক কম। আমার বাগানে প্রায় দেড় শত লিচুর গাছ রয়েছে। অন্যান্য বার ১৪০ টিতে পুরোপুরি মুকুল আসলেও এবছর মুকুল এসেছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টিতে। বাকী গাছগুলোতে নতুন পাতা বের হয়ে গেছে। পাতা বের হওয়া গাছ গুলোতে এ বছর আর মুকুল আসার কোন সম্ভাবনা নেই।'
মিরকামারী এলাকার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, আমি প্রতিবছর প্রায় কোটি টাকার লিচুর কারবার করে থাকি। তবে এ বছরে লিছুর গাছে যে পরিমান মুকুল দেখা যাচ্ছে তাতে এক তৃতীয়াংশের লিচু ও এ বছর হবে না। কেননা গাছে কোন প্রকার মুকুল নেই।
জগন্নাথপুর এলাকার লিচুর মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. তুহিন বলেন, 'অতি লাভের আশার এ বছর বেশ কয়েকটি বাগান মুকুল আসার আগেই ক্রয় করেছি। প্রত্যাশা অনুযায়ী লিচুর মুকুলের দেখা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মূখীন হব।'
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, আবহাওয়াজনিত কারনে মূলত এবার লিচুর মুকুল কম এসেছে। তাছাড়া গত বছরের শেষ দিকের বর্ষা বিদায় নিয়েছে অনেক দেরিতে। আবার এ বছর শীত শেষে হঠাৎ গরম শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার লিচুর জন্য বৈরী আবহাওয়ার কারনে মূলত মুকুলের এমন অবস্থা হয়েছে।