নাব্য সংকটে ধুঁকছে মধ্যনগরের সোমেশ্বরী ও গোমাই নদী

প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সোমেশ্বরী ও গোমাই নদীতে প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালু ও পলি জমে। এতে নাব্য হারিয়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে জেগে উঠেছে চর। সেই চর দিয়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে মানুষ। এদিকে, এই উপজেলার সঙ্গে জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় যুগ যুগ ধরে নদীপথই ভরসা। এখন নদী ভরাট হওয়ায় ধান-চাল পরিবহণে অসুবিধা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ব্যবসায়ী ও কৃষকের লোকসানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমেশ্বরী নদী নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থেকে উৎপত্তি। দুর্গাপর থেকে একটি শাখা বারহাট্টা উপজেলার ঠাকুরাকোনা হয়ে আটপাড়া উপজেলার দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে, ঠাকুরাকোনার তাইত্তর নামক স্থান থেকে একটি শাখা কংস নাম ধারণ করে যাত্রাবাড়ী থেকে মোহনগঞ্জ-ধর্মপাশা হয়ে সুখাইড় রাজাপুরের পাশ দিয়ে গাগলাজোড় বাজারের কাছে ধনু নদীতে যুক্ত হয়েছে। আর একটি শাখা নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা বাজারের পাশ দিয়ে গলহা, নিয়ামতপুর, কেশবপুর উবধাখালী নাম ধারণ করে গোরাডুবা হাওড়ের মাঝ সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধ্যনগর বাজারের পাশে গোমাই নদীতে যুক্ত হয়েছে। গোমাই নদী বারহাট্টা উপজেলার যাত্রাবাড়ী বাজারের কাছে কংস নদী থেকে একটি শাখা নদী মধ্যনগরে উবধাখালীতে যুক্ত হয়েছে। উবধাখালী নদী মধ্যনগর থেকে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে কাইতকান্দার পাশে মূল সোমেশ্বরী নদীতে যুক্ত হয়ে পূর্বদিকে দুগনই আবিদনগরের পাশ ঘেঁষে তেলিগাঁও সরস্বতীপুর হয়ে শানবাড়িতে উত্তর দিক থেকে আসা পাটলাই নদীর প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পরে এই নদী গোলকপুরের দক্ষিণে, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ আসা সুরমার প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দক্ষিণে ধনু নদীতে পড়েছে। এই ধনু নদী সুনামগঞ্জের জেলার মূল প্রবাহ মেঘনাতে মিলিত হয়েছে। আর এই সুমেশ্বরী ও গোমাই নদী নাব্য হারানোর ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীর অনেক অংশই শুকিয়ে যায়। এতে পাহাড়ি ঢলে পস্নাবিত হয় নিচু অঞ্চল। গোমাই নদী যখন সচল ছিল তখন এ রকম পরিস্থিতির তৈরি হতো না। পাইকুরাটি ইউনিয়নের জিংলিগরা  গ্রামের বাসিন্দা বিএনপির নেতা আজিলক মিয়া বলেন, 'আমাদের এই নদী খনন হলে এলাকার মানুষের অনেক ভালো হবে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এলাকার চাষিদের জমিতে পানি দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় বাঁধ ভেঙে জমি তলিয়েও যায়। ' মধ্যনগর বাজার ধান-চাল ব্যবসী তাইজুল ইসলাম বলেন, 'মধ্যনগর বাজার থেকে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মণ ধান বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়। আমাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ধানগুলো সংগ্রহ করা হয়। নদীতে পানি না থাকার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হয়। নদী খনন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। আমরা সুমেশ্বরী নদীর শানবাড়ি থেকে মধ্যনগর হয়ে কলমাকান্দা পর্যন্ত অচিরেই খনন চাই।' মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম মজনু বলেন, 'আমাদের পূর্ব উত্তরের পাহাড়ে বৃষ্টি হলে নদী দিয়ে নিচে নামে। নদী ভরাট হওয়ার ফলে মেঘালয় থেকে নামা পানি বাধার সম্মুখীন হয়। যেখানে সম্মুখীন হয় সেখান থেকে ফুলতে থাকে। এ কারণেই হাওড় ডুবে যায়।' তিনি আরও বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা বলেছে এই গোমাই নদী যখন সচল ছিল উত্তরের পানি কংস নদীতে সহজেই চলে যেত। এই পানি কংস হয়ে গাগলা জুড়ি হয়ে নিচে নেমে যেত। এভাবেই আমাদের হাওড়গুলো নিরাপদ থাকত। কৃষি প্রাণ-বৈচিত্র্যের অনন্য জনপদ হাওড়াঞ্চল। এখানে প্রাকৃতিক সম্পদ পরিপূর্ণ। এই হাওড়াঞ্চলের সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। এই কৃষির প্রাণ বৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে নদীকে রক্ষা করতে হবে। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, 'সোমেশ্বরী নদী খননের ব্যাপারটি আগামী সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করব। এলাকার লোকজনদের উপকারের স্বার্থে যাতে দ্রম্নত খনন করা হয় সে বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে।'