শ্যাওলায় ঢেকে গেছে কারুকাজ

কারুকাজ খচিত ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ

প্রকাশ | ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০

মু. জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে -যাযাদি
সংস্কারের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদ। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এটির তত্ত্বাবধানে থাকলেও এর জীর্ণ দশায় দ্রম্নত সংস্কার দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধি ও সংস্কৃতিসেবী মানুষ। জানা গেছে, প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ইসলামী স্থাপত্যের নিদর্শন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটির তিনটি দেয়ালের মধ্যে একটি দেয়ালে মাটির কারুকাজ করা মৌটিফগুলোতে লোনা ধরে গেছে। শ্যাওলা জমে নষ্ট হতে বসেছে এই সব সৌন্দর্যমন্ডিত কারুকাজ। বৃষ্টি হলে চুইয়ে মসজিদে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া মসজিদের মুসলিস্নদের ওজুর জন্য সামনে একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। আগে পুকুরটিতে বিভিন্ন ধরনের কচ্ছপ দেখা যেত। বর্তমানে মসজিদের এই পুকুরটিতে গৃহস্থালির কাজ, কাপড় কাঁচাসহ গণহারে এলাকার লোকজনের গোসলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কচ্ছপগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইসলামী স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন আতিয়া জামে মসজিদটি ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রম্নতি। বিভিন্ন ধর্মের মতাদর্শের মানুষ এখানে আসেন মনের বাসনা পূরণের জন্য-মানত করতে। মজার বিষয় হচ্ছে, রোগমুক্তির জন্য মসজিদের দেয়ালের পোড়ামাটি নিজের গায়ে মাখা ও সেগুলো খাওয়ার গল্প শোনা যায় অনেক দর্শনার্থীর মুখে। আর তাদের এসব কার্যকলাপে মসজিদটির সৌন্দর্য হারাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত চার কোণে চারটি অষ্টকোণাকৃতির মিনার বিশিষ্ট এই মসজিদটি সুলতানি ও মোগল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন। মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, তবে এর মনোমুগ্ধকর কারুকার্য হার মানায় তার আয়তনকে। পাঁচটি প্রবেশদ্বার সংবলিত মসজিদটির সামনের অংশে পোড়ামাটির বিভিন্ন নকশা আঁকা তিনটি দেয়াল রয়েছে। মসজিদটির কার্নিশে শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তৎকালীন বাংলার বেশকিছু রূপ। এ ছাড়া পোড়ামাটির তৈরি অসংখ্য ফুলের নকশা থাকার কারণে আতিয়া মসজিদটির সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক এই মসজিদের ছবি বাংলাদেশ সরকার মুদ্রিত ১০ টাকার নোটে স্থান পায়। দর্শনার্থী ঢাকার উত্তরার জসিমউদ্দীন রোডের বাসিন্দা আবির আহমেদ বলেন, মসজিদটি দেখতে আমি বেশ ক'বার এসেছি। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে আতিয়া মসজিদের জীর্ণ দশা। দ্রম্নত এটির সংস্কার করা প্রয়োজন। আতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম মলিস্নক বলেন, যত দ্রম্নত সম্ভব এই মসজিদের সংস্কারের প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি আতিয়া মসজিদের ছবিসহ ১০ টাকার নোটটি আবার মুদ্রণ ও প্রচলন করা হোক। দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক মারুফ বলেন, ঐতিহাসিকতা বিবেচনায় মসজিদটি সংস্কার করা প্রয়োজন। জনগুরুত্বপূর্ণ এই মসজিদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি, মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।