৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ

উত্তরাঞ্চলের কৃষি অথর্নীতিতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে তিস্তা ব্যারাজ

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

এমএমআই লিটন, ডিমলা
উত্তরাঞ্চলের খরাপিড়িত এলাকায় আমন ধান আবাদে দেশের সবর্বৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের (খরিপ-২) মাধ্যমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পেতে শুরু করেছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে খরা মোকাবেলায় তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প কৃষকদের মধ্যে আশীবাের্দ পরিণত হয়েছে। যার ফলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি অথর্নীতিতে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করবে প্রকল্পটি। সোমবার সরেজমিন তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রথম পযাের্য় চালু থাকা ৭১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ক্যানেলজুড়ে সেচের পানিতে ভরে উঠেছে। এখন প্রতিদিন ৩৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার প্রধান ক্যানেল, ৭৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার মেজর সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেল, ২১৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ক্যানেল ও ৩৮৭ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার টারশিয়ারী ক্যানেলে ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর পঁাচ হাজার কিউসেক করে সেচ পাচ্ছে কৃষক। পযার্প্ত বৃষ্টির অভাব এবং কোথাও কোথাও অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। পাশাপাশি রোপণকৃত আমনের চারাগুলো পানির অভাবে বিনষ্ট হতে বসেছে। সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের সেচ প্রবেশ করেছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র বলছেন অভ‚তভাবে উজান থেকে পানি আসছে। ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উথাল ঢেউ। পানিতে যেমন ভরে উঠছে নদী, তেমনি ৭১০ কিলোমিটারজুড়ে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সব সেচ ক্যানেল পানিতে টইটম্বুর। তাই রোপা আমন ধান আবাদে খরা মোকাবেলায় দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থেকে গত ১৬ জুলাই হতে সম্পূরক সেচ প্রদান শুরু করা হয়। জানা যায়, ক্যানেল সংস্কারের বরাদ্দ পাওয়ার পরও তা সংস্কারের কাজ শেষ করতে না পারায় সৈয়দপুর ও দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর ও পাবর্তীপুর উপজেলা এই সেচ হতে বঞ্চিত রয়েছে। ওই সব কৃষকরা সেচের জন্য সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোডের্ ধরনা দিয়েও সুফল পাচ্ছে না। রংপুর কৃষি অঞ্চল কাযার্লয় সূত্র জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের পঁাচ জেলায় চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে পঁাচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ৩৭ হাজার ৬৬২ হেক্টরে , উফশীজাত পঁাচ লাখ ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টরে ও স্থানীয় জাত ২৯ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারীতে এক লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ হেক্টর, রংপুরে এক লাখ ৬৪ হাজার ১৫৯ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৪৯ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে এক লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ হেক্টরসহ মোট পঁাচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টরে। কৃষি বিভাগের মতে রোপা আমনের চারা লাগানোর শেষ সময় রয়েছে আগামী ১৫ আগস্ট পযর্ন্ত। তবে যারা আগাম ব্রিধান-৩৩, বিনা-৭সহ স্বল্প মেয়াদি রোপা আমন ধান আবাদ করছে তাদের সেচের মাধ্যমে চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সূত্রমতে, গত শুস্ক মৌসুমে তিস্তা পানির প্রবাহ ছিল গড়ে দুই হাজার কিউসেক। চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ দঁাড়িয়ে ছিল ৯০ হাজার কিউসেকে। তবে চলতি জুলাই মাসে উজানের ঢলে তিস্তা পানি প্রবাহ চলছে গড়ে ৪৫ হাজার কিউসেক। ফলে নদী এখন দুবার্র গতিতে চলছে। এতে নদীর পানি সেচ প্রকল্পে অনায়াসে প্রবেশ ঘটিয়ে তা কৃষককুলের মধ্যে সরবরাহ করতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। ফলে তিস্তার ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা খরিপ-২ মৌসুমে ভরপুর পানি পেয়ে সুফল ভোগে আনন্দে আত্মহারা। উল্লেখ্য, এবার শুষ্ক মৌসুমে সেচনিভর্র বোরো আবাদে তিস্তা নদীতে পানি সংকটের কারণে খরিপ এক মৌসুমে কৃষকরা রেশনিং সিস্টেমে ৩২ হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা পেয়েছিল। এবার খরিপ ২ মৌসুমে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছেন ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বিষয়ে তিস্তা সেচ ক্যানেল এসওয়ানটি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, তিস্তা সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হবে। সেচ ক্যানেল সংস্কার না করার কারণে প্রচুর পানি থাকলেও কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের্র সম্প্রসারণ কমর্কতার্ রাফিউল বারী বলেন, চলতি মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওয়ার ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হলেও ইতোমধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে সেচ প্রদানের কাযর্ক্রম চলমান রয়েছে।