দুস্থদের সোলার প্যানেল বিত্তবানদের ঘরে!

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী
সোলার প্যানেল Ñযাযাদি
আলিশান বাড়ি, গাড়ি আর বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার পরও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকেই পেয়েছেন সোলার প্যানেল। অথচ বঞ্চিত হয়েছেন হতদরিদ্ররা। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে এসব সোলার প্যানেল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমর্কতার্ দীলিপ কুমার সেন বলেন, জন প্রতিনিধিদের তালিকা অনুযায়ী এসব সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হয়েছে। কারো নাম ঠিকানা যাচাই করারও সুযোগ থাকে না। জানা গেছে, বিদ্যুৎবিহীন হতদরিদ্র পরিবারে সরকারি অথার্য়নে সোলার প্যানেল বিতরণের কাযর্ক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুযোর্গ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অথার্য়নে কাবিটা এবং টিআর কমর্সূচির আওতায় ২০১৪ সাল থেকে উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়। কিন্তু এই সোলার প্যানেলগুলো বিদ্যুৎবিহীন ও হতদরিদ্র পরিবার পাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় বেশির ভাগ চলে গেছে বিত্তবানদের ঘরে। যাদের ঘরে আগে থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ উপজেলার চাদপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল বারির বাড়িতে রয়েছে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ। তা সত্তে¡ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি পেয়েছেন একটি সোলার প্যানেল। একই গ্রামের আব্দুল হামিদ মিকুশিস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধমীর্য় শিক্ষক ও হেমায়েতপুর বাজারে ওষুধ ব্যবসায়ী। তার বাড়িতে বিদ্যুত সংযোগ থাকার পরও সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানুর বিশেষ সুপারিশে তাকেও একটি সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে। দুলালনগরের খোকনের দুই ছেলে প্রবাসী। রয়েছে আলিশান বাড়ি ও গাড়ি। তিনিও পেয়েছেন সোলার প্যানেল। অথচ গ্রামের লোকমান হোসেন, মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের মন জয় করতে না পারায় তারা বঞ্চিত হয়েছেন সোলার প্যানেল থেকে। শুধু চঁাদপুর কিংবা দুলালনগর নয়, এমন অনিয়ম রয়েছে উপজেলা জুড়ে। কসবা গ্রামের আজির উদ্দীন জানান, তার বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকা-পয়সা না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেননি তিনি। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি। বেতবাড়িয়া মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম বাশার জানান, দিঘির্দন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বিদ্যালয়ে। আবেদন করা হয়েছে, টাকাও জমা দেয়া হয়েছে। পরে আবার নতুন ভবন স্থাপিত হওয়ায় দূরত্ব বেড়ে গেছে। একটি বৈদ্যুতিক পিলারের অভাবে আজও বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি। সোলার প্যানেলের জন্য সংসদ সদস্য ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। তিনি জানান, অনেক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার পরও সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে অথচ তার বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকলেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। প্রচÐ গরমে শিক্ষক-শিক্ষাথীের্দর কষ্ট হয় এবং পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমর্কতার্ দীলিপ কুমার সেন জানান, ২০১৪ সাল থেকে ত্রাণ ও দুযোর্গ মন্ত্রণালয়ের অথার্য়নে কাবিটা এবং টিআর কমর্সূচির আওতায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে জেলায় প্রায় ৬ হাজার সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা যে তালিকা প্রদান করেন সেই তালিকা অনুমোদন করা হয়। কে ধনী আর কে দুস্থ সেটি দেখার ক্ষমতা নেই তাদের। এদিকে গাংনী উপজেলা নিবাহীর্ অফিসার বিষ্ণুপদ পাল জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার পরেও সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছেÑ এটা তিনি জানেন না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার বানু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোনো জিনিস দেন তখন তিনি গরিব বড় লোক দেখে দেন না। দলীয় লোকজনের কাছ থেকে নামের তালিকা পেয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে দেয়া হয়। নামের তালিকা যাছাই-বাছাই করা সম্ভব হয় না।