পঞ্চগড়ে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড়ে পঞ্চগড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ে গাছ পড়ে অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা। রাস্তার ওপর গাছ পড়ে থাকায় প্রায় ১০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক। রোববার দিবাগত রাত ১১টা থেকে পরবর্তী আধা ঘণ্টা ধরে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী ও বোদা উপজেলা। এই তিন উপজেলার প্রায় ১৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে রোববার বিকালে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। রোববার রাত সাড়ে ১০টা থেকে বিদু্যৎবিচ্ছিন্ন পঞ্চগড়ের অধিকাংশ এলাকা। স্থানীয়রা জানায়, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই পঞ্চগড়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১১টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়। প্রায় আধা ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারি ও বোদা উপজেলায় ঝড়ে গাছ পড়ে ভেঙে যায় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। অগণিত গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে। গাছ পড়ে অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের পর থেকেই পঞ্চগড় জেলা সদরের মিলগেট থেকে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী পর্যন্ত পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের প্রায় আট কিলোমিটার অংশে সড়কে গাছ পড়ে থাকায় মহাসড়কের দু'ধারে আটকা পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। রাত থেকে স্থানীয় লোকজন এবং সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে সড়ক চলাচলের উপযোগী করে। সকাল ৯টার পর থেকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক। বোদা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি ইউনিয়ন। রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চারশ বাড়িঘরের প্রায় চৌদ্দশ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পঞ্চগড় সদরের ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ছয়টি। ঘূর্ণিঝড়ে এ সকল ইউনিয়নের ৩১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং পাঁচশ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এই উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নে অতিবৃষ্টির কারণে পানিবন্দি তিনশ মানুষ চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাতে খিচুড়ি দেয়া হবে। এই উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের খানপুকুর গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আটোয়ারী উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি ইউনিয়ন। এ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক হাজার পাঁচশ পরিবার। পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, ঝড় এবং অতিবৃষ্টিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। অসংখ্য গাছপালা বিনষ্ট হয়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে অতিবৃষ্টির কারণে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের মাঝে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি দেয়া হচ্ছে। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহেতেশাম রেজা জানান, রোববার ঘূর্ণিঝড়ের পঞ্চগড় জেলার তিনটি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও গাছপালার চূড়ান্ত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করছে। সব উপজেলা থেকে রিপোর্ট এলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হবে।