চামড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নওগাঁ প্রতিনিধি কোরবানি ঈদকে ঘিরে পশুর চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত বছরগুলোর টাকা বকেয়া আছে। ব্যবসায়ীদের হাতে কোনো টাকা পয়সা নাই। অনেক ব্যবসায়ী এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র ব্যবসা করছেন। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে বাজারে চামড়ার দাম কম। এ বছর চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৫ বছরে ট্যানারি মালিকদের নিকট থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় থেকে দক্ষিনে দুবলহাটি রাজবাড়ী যাওয়া রাস্তায় হাট-নওগাঁ মহলস্না। এক সময় হাট-নওগাঁর এ রাস্তায় 'চামড়া পট্টি' নামে পরিচিত ছিল। অনেক দুর পর্যন্ত বাতাসে সেই চামড়ার গন্ধ ভেসে যেত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই 'চামড়া পট্টি' এখন বদল হয়েছে। 'চামড়া পট্টি' নাম হলেও সেখানে এখন মুদি, সাইকেল, সিরামিক, পস্নাস্টিক সামগ্রীর দোকান গড়ে উঠেছে। কোরবানির ঈদ ছাড়া তেমন চামড়া ওই এলাকায় দেখা যায়না। 'চামড়া পট্টি' নাম হয়ত আর কয়েক বছরের মধ্যে বিলিন হয়ে যাবে। এর কারণ একটাই চামড়া ব্যবসায়ীরা লোকসানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তারা এখন অন্য পেশা বেঁছে নিয়েছেন। জীবন জীবিকায় কেউ মুদি দোকান কেউ বা পান, বিড়ির দোকান দিয়েছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে ব্যবসায়ীদের টাকা বকেয়া পড়েছে। জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ২০০ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীরা কোরবানীর সময় আসলে ধার দেনা করে টাকা সংগ্রহ করে চামড়া কিনেন। অথচ দফায় দফায় সময় নিয়েও বিগত বছরের পূর্বের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাত দেখান। ফলে এবছর চামড়া কেনা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরনা দিয়েও তারা টাকা পাচ্ছেন না। কোরবানির ঈদের সময় যে চামড়া কিনতে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া কেনার জন্য তাদের আগাম কিছু প্রস্তুতি থাকে। লবন সংগ্রহ, দা ও ছুরি এবং শ্রমিকদের মজুরি দেয়া। চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, চামাড় কেনার জন্য তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋন দেয়া হয়না। ঋন দেয়া হয় ট্যানারি মালিকদের যাদের কোটি কোটি টাকা আছে। ট্যারানি মালিকরা চামড়া কিনে নিয়ে যাওয়ার পর বলা হয় নষ্ট হয়ে গেছে। যে দামে তারা কিনে নিয়ে যান, পরিবর্তীতে বলা হয় দাম কমে গেছে। এজন্য কম দাম নিতে হবে। ট্যানারি মালিকদের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। চামড়া ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘ ৪৭ বছর থেকে চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ৫ বছর থেকে এ ব্যবসায় দূর্দিন দেখা দিয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রচুর টাকা বকেয়া আছে। আগামীতে কোরবানির চামড়া কেনার প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত নিতে পারিনি। যাদেরকে চামড়া দেয়া হয়েছে ফোন দিলে রিসিভ করেন না। আবার ঢাকাতে যাওয়া হলে যে ২ হাজার টাকা খরচ হয় সেটাও তারা দেন না। শুধু হয়রানি করেন। সাবেক কোষাধ্যক্ষ সাদেক হোসেন বলেন, বংশগত ভাবে চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত। ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা পাওনা আছি। দু'একজন দেশের বাহিরে চলে গেছেন। চামড়া যে কিনব হাতে কোন টাকা পয়সা নাই। দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। সরকার যেভাবে ধান, চাল সংগ্রহ করেন সেভাবে যদি চামড়া কিনা হয়, তাহলে ট্যানারি মালিকরা সুযোগ পেতেন না। এতে করে আমরা চামড়ার দামও ভাল পেতাম। নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রম্নপের সভাপতি মোমতাজ হোসেন বলেন, আমরা চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে গত ৫ বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওনা আছি। চামড়ার টাকা বকেয়া থাকায় এ বছর চামড়া কেনার কোন প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।