দর্শনার্থীর পদভারে সীতাকুুন্ড ইকোপার্ক

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
ঈদকে ঘিরে পর্যটক ও দর্শনার্থীর সমাগমে মুখর ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে সীতাকুন্ডের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। ঈদের দিন থেকে শুরু করে প্রতিটি দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ভিড় জমিয়েছেন বিনোদনপ্রেমিরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা। এতে নানা বয়সী নারী, পুরুষ ও শিশুদের পদচারণে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। ইকোপার্কে গিয়ে দেখা গেছে, গত তিনদিন ধরে অসংখ্য পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পর্যটন স্পটটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন স্থাপন করলে দেশবাসীর কাছে এটি একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে দর্শণার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে ইকোপার্ক। দেখা গেছে, এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড হাউস, গ্রিন হাউস, পদ্মপুকুর, ভ্যালি ব্রিজ, প্রাকৃতিক লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। গার্ডদের মতে ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বাঁদর, নানারকম মায়া হরিণসহ কয়েক প্রকার বন্য প্রাণী। পার্কের গাইড কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষণ হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো রকমের দুর্লভ প্রজাতির গাছ। তাছাড়া পার্কের চূড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। গাইডদের মতে পার্ক থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকালে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। এতে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের মতোই পাহাড় ও সমুদ্র দর্শন করে আবেগে আপস্নুত হন আগতরা। বরিশাল থেকে দর্শনার্থী ফয়সাল, রাকিব, লোকমান, সাকিব ও খোকনসহ কয়েকজনের ভাষ্য, ইকো পার্কে প্রবেশ পথে প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে অনেক খানাখন্দের কারণে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে জলপ্রপাতে বর্ষার রূপ ও প্রবল বেগে পাথরের ওপর আছড়ে পড়া বৃষ্টির পানি দেখে আমাদের মন ভরে গেছে। পার্কে আগত দর্শনার্থী ইকবাল হোসেন রুবেল বলেন, 'শহুরে একঘেঁয়ে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এমন পাহাড়ি নির্জনতা নিঃসন্দেহে সবার কাছে আকর্ষণীয়।' তিনি আরও বলেন, 'এখানকার মূল আকর্ষণ যে ঝর্ণাটি তা দেখে তিনি মুগ্ধ। এখানে এসে তার মনে হয়েছে আসলেই এদেশে অনেক কিছুই দেখার আছে। তবে যেখানে সেখানে অবাধে ধূমপান তার ভালো লাগেনি।' এখানে এসে মুগ্ধ হওয়ার কথা জানিয়ে পটিয়ার রবিউল হোসেন বলেন, 'এখানকার বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন অনেক অজানা দুর্লভ বৃক্ষের নাম পরিচয়। যা তার চলার পথে অনেক কাজে লাগবে বলে তিনি মনে করেন। আর পার্কের সৌন্দর্যের দারুণ প্রশংসা করলেও তিনি এখানে ব্যবস্থাপনা কিছুটা দুর্বল বলে মনে করছেন। ফলে পাহাড় চূড়ার দোকানদার ২০ টাকা মূল্যের পানির বোতল ৫০ টাকা আদায় করা ছাড়াও সব কিছুর মূল্যই দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন বলে তার অভিযোগ। এদিকে ছোটখাটো এই অভিযোগগুলোর কথা বাদ দিলে যারা এখানে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছেন তারা সকলেই মুগ্ধ আকাশের বুকে পাহাড়ের হেলান দিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য কিংবা নয়নাভিরাম ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ইকোপার্কের প্রবেশের প্রধান ফটকের ইজারাদার মো. সাহাবউদ্দিন জানান, 'গত তিনদিন পর্যন্ত পার্কে প্রচুর পর্যটক ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। বর্ষাকাল হওয়ায় পার্কের দুটি ঝর্ণা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে কার্পণ্য করিনি। এতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে।