রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উৎসবমুখর ঈদ

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার ভয়াল ও লোমহর্ষক নির্যাতনের স্মৃতি ভুলে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে অবস্থানরত প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গারা। নামাজ আদায়ের পর তাদের অনেকেই এবার কোরবানিও দিয়েছে। যারা কোরবানি দিতে পারেনি, সরকার ও এনজিও'র পক্ষ থেকে তাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এবার বেশি হাসি খুশি আনন্দটা দেখা গেছে তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের সংখ্যা বেশি। ঈদের দিন নানা বয়সী রোহিঙ্গারা নতুন জামা-কাপড় পরে ঘোরাঘুরি আর স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ছাড়াও প্রতিটি শিবিরে শিশুরা নাগরদোলা, খাওয়া ও মেলাতে মেতে ছিল দিনভর। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি বস্নকে প্রায় সহস্রাধিক মসজিদে সকাল ৮টায় একযোগে ঈদের জামাত আদায় করে তারা। এরপর শুরু হয় প্রতিটি বস্নকে বস্নকে পশু কোরবানি ও মাংসের ভাগ-বাটোয়ারা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে পশু কোরবানি করতে পারায় দারুণ খুশি রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনুছ আরমান বলেন, 'আমি একটি গরু কোরবানি দিয়েছি। নিজের বাড়ির জন্য কিছু মাংস রেখে বাকি মাংসগুলো আমার প্রতিবেশীদের ভাগ করে দিয়েছি। কারণ, এ বছর এনজিও'রা কোরবানির মাংস কম বিতরণ করেছে। বিশেষ করে নিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে মোটেও দেয়া হয়নি।' নামমাত্র মাংস দিয়েছে কিছু এনজিও। টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা নির্যাতন সইতে না পেরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার সময় প্রায় দুই বছরের মত। এরমধ্যে সেই আমাদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা অনেকেই সেই নির্মম হত্যাকান্ডের স্মৃতি ভুলতে বসেছে। যে কারণে এবারের ঈদ গতবারের চেয়ে অনেক আনন্দ দায়ক হয়েছে রোহিঙ্গা সমাজে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, এবার এক লাখ ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে দুই কেজি করে মাংস দেয়া হয়। অন্তত পাঁচ হাজার পশু জবাই করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। সরকার ও এনজিওরা মিলে এসব পশু কোরবানি দিয়েছে। একইভাবে স্থানীয়দের মধ্যেও কোরবানির পশু বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবেও কোরবানির পশু দান করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি বর্মীদের অত্যাচারে দ্বিতীয় দফায় উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমি আশ্রয় নেয় প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। এদেও মধ্যে ৩৬ হাজার শিশু শুধুমাত্র বাবা-মা দু'জনকে হারিয়েছে।