সভ্যতার বিবর্তনে বিলুপ্ত বাবুই পাখির বাসা

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
তালগাছে বাবুই পাখির বাসা -ফাইল ছবি
'বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে।' কবি রজনীকান্ত সেনের লেখা এই কবিতায় ফুটে উঠেছে বাবুই পাখির শিল্পনিপুণতার কথা। কবিতাটি এখনো প্রাথমিক শিক্ষায় তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকায় কবিতা পড়েই শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির বাসা সম্পর্কে জানতে পারে। তবে আগের মতো গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন সেই ছোট্ট বাসার নৈসর্গিক দৃশ্য। আধুনিক সভ্যতার বিবর্তন ও অপরিকল্পিত গাছ কাটার ফলে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বয়নশিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। বাবুই পাখি সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই পাখি জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় গুঁজে এবং সকাল হলে আবার ছেড়ে দেয়। বাবুই পাখির বাসা দেখতে একদম উল্টানো কলসির মতো। বাসা বানাবার জন্য বাবুই পাখি খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে পালিশ করে গোল অবয়ব মসৃণ করে। সাধারণত তালপাতা, ঝাউ, খড় ও কাশবনের লতাপাতা দিয়েই বাবুই পাখি উঁচু গাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে বেশ আকর্ষণীয় ও মজবুত হয় এবং প্রবল ঝড়েও তা পড়ে না। তৈরির শুরুতে বাসায় দুইটি নিম্নমুখী গর্ত থাকলেও পরে একদিক বন্ধ করে তাতে ডিম রাখার জায়গা তৈরি করে। অন্যদিক দিয়ে তৈরি করে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথ। সীতাকুন্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি সেকান্দর হোসাইন বলেন, সীতাকুন্ডের গ্রামীণ জনপদে প্রায় বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির বয়নশিল্পী বাবুই পাখি ও তার বাসা। আগের মতো এখন আর প্রকৃতিপ্রেমীদেরও চোখে পড়ে না বাবুই পাখি। একসময় সীতাকুন্ডের গ্র্রামাঞ্চলে উঁচু তালগাছের পাতার সঙ্গে বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখি ও তাদের তৈরি বাসা আজ প্রায় বিলুপ্ত।