কাঁচা ধানে ইঁদুরের হানা দিশাহারা বরেন্দ্রের কৃষক

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর
বরেন্দ্র অঞ্চলে এবার আমন ধানখেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুর। আমনের মাঝামাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। চলছে আশ্বিন মাস। সবুজে সবুজে ভরে ওঠছে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে ওঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সবুজ স্বপ্নের ছড়াছড়ি। এমন সময় আমনের মাঝামাঝি মুহূর্তে খেতের কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুরের দল। ইঁদুরের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষকরা। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা জানান, রোবো ধানের দাম না পেয়ে অনেক লোকসানের মধ্যে পড়েছিল কৃষক। সেই লোকসান মাথায় নিয়ে আমন চাষাবাদে নেমেছেন তারা। মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে আমনের কিছুটা ক্ষতি হলেও শেষ সময়ে এসে বৃষ্টি ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্ত কাঁচা ধান ইঁদুর কেটে দেয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা খেতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিষের টোপ, আতপ চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। রাজশাহী অঞ্চলের জেলা উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। তবে শুধু বিষের টোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধে দিলে এবং রাতে ফসলের খেতে টায়ার পোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুর কিছুটা ভয়ে খেত ছেড়ে চলে যাবে। কৃষকদের দেয়া হচ্ছে পরামর্শ। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধঞ্চে গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপরে। ইঁদুরের আক্রমণে দেশে বছরে ক্ষতি হয় ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ফসল। ২০১৪-১৫ সালে ইঁদুরের আক্রমণে মোট ৭২৩ কোটি ৭২ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫ টাকার শুধু ধান, চাল ও গমের ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৩ সালের এক গবেষণার উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। তাই ইঁদুর প্রতিহত করতে সরকারসহ কৃষকদের সচেতন হতে হবে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় গ্রামে কৃষক সোহেল জানান, চলতি মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় তার খেতে ধানের ফলন অন্য বছরের চেয়ে ভালোই হয়েছিল। কিন্ত তার ৮ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক মতো আধাপাকা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর। পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আজিজ জানান, তার চার বিঘার খেতের কাঁচা ধান কেটে ফেলেছে ইঁদুর। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী রাতে খেতের পাশে পুরনো টায়ার পোড়ানো, পটকা ফুটানো, বিষের টোপ ব্যবহার করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা জানান, খেতে পোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যাচ্ছে। কিন্তু ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তাই সরকারকে ইঁদুর দমনে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। যেন সব কৃষক ইঁদুর থেকে রক্ষা পায়। না হলে খেতের অর্ধেক ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যাবে। লোকসানে পড়বে কৃষক। তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকা দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমসের আলী জানান- এই ইঁদুর গাছে এমনকি অনেক সময় পানির ওপর খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে বসবাস করে। এই ইঁদুর দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সামনে যা পায় কেটে তছনছ করে দেয়। আমন ক্ষেতে বাতাসে দোলে এমন পাতা যুক্ত ছোট কলা গাছ রোপন করে খুঁটির সঙ্গে পাতলা পলিথিন বেঁধে দিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাতাসের কলা পাতা নড়লে বা খুঁটির সঙ্গে বাঁধা পাতলা পলিথিন বাতাসে উড়লে ক্ষেতে লোকজন আছে ভেবে ক্ষতিকর এ সব ইঁদুর অন্যত্র চলে যায়। এ ছাড়াও রাতে ক্ষেতের পাশে পুরনো টায়ার পুড়ালে তার গন্ধেও তারা ক্ষেত ছেড়ে পালায়। শুধু আমন ক্ষেতেই নয় বাসাবাড়ীতেও এ ধরনের ইঁদুরের উৎপাত লক্ষ্য করা গেছে সেখানেও এ সব পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।