মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় হতাশ জেলেরা

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ইসরাত জাহান, বাগেরহাট
ইলিশ প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাগেরহাটের জেলে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনিতেই কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে জেলেরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তার মধ্যে আরও ২২ দিন মাছ ধরায় অবরোধ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ছিল জেলেরা। জেলেরা বলছেন, ৫ মাসের মৌসুমে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই ঋণে পড়ছেন। এতসব ক্ষতি মেনে নিয়ে বাংলাদেশি জেলেরা মাছ আহরণ বন্ধ রাখলেও বাংলাদেশের জল সীমায় প্রবেশ করে বিদেশি জেলেরা মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশে সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাটের কেবি বাজারে জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, বছরে মাত্র ৫ মাস ইলিশ আহরণ করা যায়। সাগরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মাছ ধরেন। আর এ সময়ের মধ্যেই সরকারের একাধিক নিষেধাজ্ঞা থাকে। মাত্র ৫ মাসের মৌসুমে এত বেশি নিষেধাজ্ঞা থাকলে তারা কীভাবে মাহজনের ঋণ শোধ করবেন। ট্রলার মালিক মানিক হোসেন বলেন, প্রতিবার সাগরে একটি ট্রলার পাঠাতে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ বছর যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তাতে খরচের টাকাও উঠছে না। তারা এ বছরের মতো এত ক্ষতির মুখে কখনো পড়েননি। জেলে রুস্তম আলী বলেন, ৬৫ দিনে অবরোধটা একটু কমিয়ে এবং অবরোধের সময় এগিয়ে নিয়ে আসলে জেলেরা আরও বেশি ইলিশ ধরতে পারবে। আসলাম নামে আরেক জেলে বলেন, '২২ দিন অবরোধের সময় সরকার মাত্র ২০ কেজি চাল দেয়। আমারতো ৬ জনের সংসার, বিশ কেজি চালে কি হয়! দুই বারের অবরোধে প্রায় ত্রিশ দিন বেকার থাকতে হয়। এর সাথে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হয়। এই সময়ে কোনো আয় থাকে না। মাছ ধরা বন্ধ সময় থাকার সময় সরকার বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে তারা ভালো থাকতে পারেন। বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কেবি বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বলেন, বর্তমান মাছের যে অবস্থা তাতে এ ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করে ইলিশ মাছের এমন বিপর্যয় তিনি আর দেখেননি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে অবরোধের ফলে দেশের মোট ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, ইলিশের গড় আকারও বড় হয়েছে। জেলায় ৩৯ হাজার পাঁচশ জেলে রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা, শরণখোলায় ইলিশ জেলে রয়েছে। অবরোধের সময় এই সাত উপজেলার জেলেদের সহযোগিতা করা হবে।