জলে ভেসে শিখবে মান্তা শিশুরা

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

আইয়ুব খান, রাঙ্গাবালী
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে ভাসমান স্কুল উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক -যাযাদি
জলেভাসা সম্প্রদায়ের নাম মান্তা। জীবনের শুরু এবং শেষ পর্যন্ত নৌকাতেই কাটে তাদের। যে বয়সে শিশুদের হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, সেই বয়সেই ওইসব কোমলমতি শিশুদের দেয়া হয় বৈঠা বাওয়ার শিক্ষা। ৮-১০ বছর বয়স থেকেই নদীতে মাছ ধরতে যায় ওরা। শিশুদের জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না শিক্ষার ছোঁয়া। কিন্তু এখন থেকে সেই শিশুরা লেখাপড়া শিখবে। হৈ-হুলেস্নাড় করে স্কুলে যাবে। মান্তা শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দাতাসংস্থা মুসলিম চ্যারিটি হেলপিং দ্য নিডির (ইউকে) আর্থিক সহায়তায় ও উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারীর বাস্তবায়নে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্স্নুইসের খালে ভাসমান 'শিশু বাগান' নামক একটি প্রাক-প্রাথমিক বোট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষা বঞ্চিত মান্তা শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ত্রিশ মাসের একটি 'ইআইএমসি' নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুর ১২টায় ভাসমান ওই প্রাক-প্রাথমিক বোট স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক ওই স্কুলের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আমরা চাই তোমরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। চাকরিজীবী হবে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।' এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়ার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগীর, বরগুনা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, মুসলিম চ্যারিটির কান্ট্রি সমন্বয়কারী ফজলুল করিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) একে সামসুদ্দিন আবু প্রমুখ। সরেজমিন দেখা গেছে, চরমোন্তাজ স্স্নুইসের খালে শিশু বাগান নামক ওই স্কুলটি ভাসমান। দেখতে অনেকটা একতলা ছোট লঞ্চের মতো। ভেতরে সুসজ্জিত শ্রেণি কক্ষ। বসার জন্য মেঝেতে বিছানো হয়েছে মাদুর। বিনোদনের জন্য রয়েছে টিভি। মান্তা শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভাসমান স্কুলটিতে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মান্তা জনগোষ্ঠীর স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি, খুব দ্রম্নত তা দৃশ্যমান অবস্থায় দেখা যাবে।