চা-দোকানি টুক্কা রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন ৫২ প্রাণ

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ
রক্ত দিয়ে মানবসেবা করছেন সিরাজগঞ্জের চা দোকানি টুক্কা -যাযাদি
সিরাজগঞ্জ শহরের চৌরাস্তা প্রেসক্লাব মোড়ের চা দোকানি টুক্কা রক্তদান করে এখন পর্যন্ত বাঁচিয়েছেন ৫২ জন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ। যাদের রক্ত কেনার সামর্থ্য নেই তিনি শুধু সেই মানুষদেরই রক্ত দিয়ে থাকেন। দিন নেই, রাত নেই, শীত-গ্রীষ্ম যখনই রক্তের প্রয়োজন, তখনই ছুটে যান তিনি। দিয়ে আসেন নিজ শরীরের রক্ত। গত ৩০ বছর ধরে তিনি এই মহৎ কাজটি করে আসছেন। প্রথম দিকে প্রতি তিন মাসে একবার রক্ত দিলেও এখন বয়স হওয়ায় বছরে একবার রক্ত দেন। স্বেচ্ছায় রক্তদানের মতো মহৎ কাজের জন্য সামাজিক সংগঠন সম্মিলিত বাংলাদেশের 'রক্তদান সম্মেলন ২০১৯' তাকে দিয়েছে সনদপত্র ও সম্মাননা ক্রেস্ট। নাম শফিকুল ইসলাম। বয়স বাড়ে কিন্তু সে অনুপাতে দৈহিক গঠন বাড়ে না। এ কারণে পরিচিতজনরা তাকে দুক্কা নামে ডাকেন। সেই দুক্কা নিজের নাম শফিকুল ইসলামকে ছাপিয়ে হয়েছেন টুক্কা। বয়স ৬০ বছর। জন্ম শহরের জানপুর মহলস্নায়। বাবা মুজিবুর রহমান। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান তিনি। ৩ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। অর্থনৈতিক টানাপড়েনে টুক্কার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ হয়নি। স্বাধীনতার পর তিনি গ্রামের এক চায়ের দোকানে চাকরি নেন। পরে পরিচিতজনদের সহযোগিতায় চৌরাস্তা মোড়ে তৎকালীন টেলিফোন ইন্সপেক্টরের বাসার সামনে নিজেই শুরু করেন চায়ের দোকান। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে বাসদ অফিসের বারান্দায় স্থানান্তর করেন চায়ের দোকানটি। সিরাজগঞ্জের সবাই টুক্কার চায়ের দোকান নামেই চিনেন। প্রয়াত উপ-প্রধানমন্ত্রী ডা. এম. এ. মতিন, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বর্তমান সাংসদ অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিলস্নাত মুন্না থেকে শুরু করে কেউই বাদ যাননি টুক্কার দোকানের চা পানের সুযোগ থেকে। রক্ত দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টুক্কা বলেন, তার মামাতো বোনের জন্য রক্ত লাগতো। তার আপন তিন ভাইয়ের রক্তের গ্রম্নপের মিল থাকলেও তারা দিতে ভয় পায়। খবর পেয়ে তিনি রক্ত দিলেন। সেই থেকে শুরু। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরপরই সিরাজগঞ্জের ঝাঐল ওভার ব্রিজের কাছে একটি বড় বাস দুঘর্টনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় আতহদের রক্ত দেন। গত তিরিশ বছরে যে কোনো গরিব রুগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই তিনি নিজ খরচে রক্ত দিয়ে আসেন।