মাছ ধরার ফঁাদ তৈরি করে সংসার চালান আব্দুল গফুর

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

মো. মনিরুজ্জামান ফারুক, ভাঙ্গুড়া
ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ি গ্রামের খাদুন তৈরির কারিগর আব্দুল গফুর Ñযাযাদি
বষার্ মৌসুম এলে প্রতি বছর চলনবিলাঞ্চলের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মাছ ধরার উৎসব পড়ে যায়। মৎস্যশিকারীরা জাল, পলো, বাদাই, বড়শি, বাসুন, খাদুনসহ নানা রকমের ফঁাদ ব্যবহার করে মাছ ধরে থাকেন। বষার্কালে এ অঞ্চলের দিনমজুর শ্রেণির মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই তারা এ কয়েক মাস মাছ ধরে তা হাটবাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। এছাড়াও জেলেদের পাশাপাশি অনেক শৌখিন মৎস্যশিকারী আছেন, যারা মাছ ধরে আনন্দ পান। বৃদ্ধ আব্দুল গফুর। বয়স ৬৫ বছর। মাছ শিকারে ব্যবহৃত ফাঁদ খাদুন তৈরি করা যার পেশা। পাশের উপজেলা ফরিদপুরের বিএলবাড়ি গ্রামে তার বাড়ি। পিতার নাম মৃত আব্দুল মমিন প্রামানিক। উপজেলার ভবানীপুর দিয়ারপাড়া গ্রামে মাছ ধরার খাদুন তৈরি করতে এলে কথা হয় তার সাথে। তিন সন্তানের জনক আব্দুল গফুর। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতি বছর বষার্ মৌসুম শুরুর আগে থেকেই খাদুন তৈরির কাজে নেমে পড়েন তিনি। কারও খাদুন তৈরির প্রয়োজন হলে তাকে খবর দিলে তিনি বাড়িতে গিয়ে সেটি তৈরি করে দিয়ে আসেন। আব্দুল গফুর বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত তিনি ৫/৬টি খাদুন তৈরি করতে পারেন। বিনিময়ে প্রতিদিন পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি পান ৪০০ টাকা। এছড়াও অন্য সময় লোকের বাড়িতে দিনমজুরির কাজ করে জীবিকা নিবার্হ করেন। দীঘর্ ১০/১২ বছর যাবৎ তিনি খাদুন তৈরির পেশায় রয়েছেন। খাদুন তৈরির কারিগর বৃদ্ধ আব্দুল গফুর আরও জানান, তার বাপ-দাদাকে দেখেছেন খাদুন তৈরি করতে। তাদের কাছ থেকেই তিনি এ কাজ শেখেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে তার। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। তাই এ বয়সেও স্ত্রীকে নিয়ে নিজের সংসার নিজেকেই চালাতে হয়। এলাকার মৎস্যশিকারীদের খাদুন তৈরি করে দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। এ বছর তিনি এ পযর্ন্ত প্রায় ৩ শতাধিক খাদুন তৈরি করেছেন। এতে তার বেশ ভালো উপাজর্ন হয়েছে। খাদুন তৈরি করতে প্রয়োজন হয় বাঁশের শলা, লই (এক প্রকারের গাছের লতা) ও কটসুতা। এক আটি লইয়ের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এই লই আবার সব জায়গায় পাওয়া যায় না। পাশের চাটমোহরসহ বিভিন্ন জায়গায় লইয়ের হাট বসে। সেখান থেকে কিনতে হয় এই লই। মৎস্যশিকারীরা জানান, নদীর ধার, ডোবা-নালায় খাদুন পেতে রাখলে শোল, বোয়াল, টাকি, কৈ প্রভৃতি মাছ পড়ে। উপজেলার মৎস্যশিকারীদের কাছে মাছ ধরার ফাঁদ খাদুন অনেক জনপ্রিয় হওয়ায় এটি ব্যবহার করে প্রতি বছর তারা মাছ শিকার করে থাকেন। এলাকার শৌখিন মৎস্যশিকারী গোলাম মোস্তফা সুজন বলেন, মাছ ধরার জন্য সম্প্রতি তিনি আব্দুল গফুরকে দিয়ে তিনি ১২টি খাদুন তৈরি করে নিয়েছেন।