রাজশাহীতে সবজি চাষে বিপস্নব

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর
রাজশাহীর তানোরে বাড়িতে সবজির পরিচর্যা করছেন একজন কৃষক -যাযাদি
বাড়ির চালায় সেজে আছে বড় বড় চালকুমড়া। বাঁশের তৈরি মাচানে মাচানে ঝুলছে শিম। ধরে আছে সজনে। কোথাও আবার বাড়ির পাশ ঘেঁষে পটল, করলা, শসা, বেগুন, লালশাকসহ নানা ধরনের নতুন নতুন শীতের সবজি রয়েছে খেতে। সবজির এমন দৃশ্য বরেদ্র অঞ্চলের যে কোনো গ্রামে এলেই দেখা মিলবে হরহামেশাই। এসব সবজি চাষ করে অনেক চাষি অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। অনেক পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। বাড়িতে এসব সবজি চাষ করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, উৎপাদন খরচ কম পড়ে। এতে লাভের পালস্না বেশি থাকে। এছাড়াও সবজিতে পরিবারে চাহিদাও মিটে। এসব কারণে দিন দিন গ্রামে সবজি চাষ বেড়েই চলছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর হাজিপাড়া গ্রামের দিনমজুর খলিলুর রহমান। পাঁচ বছর আগে মাত্র দুই শতক জমির ওপর মাটি দিয়ে দুই কক্ষের একটি বাড়ি করে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন তিনি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বাড়িতে সবজি চাষে অভাব-অনটন যেন বহুদূরে পালিয়েছে খলিলুরের। এ গল্প শুধু দিনমজুর খলিলুর রহমানের একারই নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই এখন কোনো না কোনো সবজি চাষ হচ্ছে। বাড়ির পাশে এসব সবজি চাষ করে নিজেদের সবজির চাহিদা পূরণ করছেন আবার অতিরিক্ত হলে বাজারে বিক্রিও করছেন অনেকে। যার কারণে অনেক অসচ্ছল পরিবারে এখন সচ্ছলতা দেখা দিয়েছে। এখানেই শেষ কথা নয়- বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল, রহনপুর এবং নওগাঁর শত শত কৃষক এখন ধান চাষ ছেড়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ শুরু করেছেন। সবজি চাষে বরেন্দ্রের মাটিতে যেন এক নীরব বিপস্নব ঘটছে। এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে আট বছর ধরে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধান ছেড়ে অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষিবিদরা বলছেন, পানিসাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়াতে গিয়ে এ বছর রাজশাহী জেলা সবজি উৎপাদনে দেশসেরা হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে ২২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন হয়েছে ১৮ দশমিক ১২ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী জানান, সবজি চাষ করে অল্প জমি থেকে বেশি আয় সম্ভব হওয়ায় দিন দিন এর পরিধি বাড়ছে।