আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নুরে আলম ফয়জুলস্নাহ, ভোলা আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলসহ ভোলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল। সেই স্মৃতি নিয়ে আজো যারা বেঁচে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে যারা আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন সেই বিভীষিকাময় দিনটি মনে পড়তেই আতঙ্কে উঠছেন। দিনটি স্মরণে আলোচনা সভা, সেমিনার, কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছিল। ধারণা করা হয় প্রলয়ংকরী ওই দুর্যোগে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তন্মধ্যে ভোলা জেলায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আর অসংখ্য জনপদ বিরান হয়। উত্তাল মেঘনা নদী আর তার শাখা-প্রশাখাগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল লাশের নদীতে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। ৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরো খারাপ হতে লাগল এবং মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে উঠতে লাগল সমুদ্র। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসল পাহাড় সমান উঁচু ঢেউ। ৩০/৪০ ফুট উঁচু সেই ঢেউ আছড়ে পড়ল মানুষের উপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো মানুষ, গবাদিপশু, বাড়ি-ঘর এবং ক্ষেতের সোনালি ফসল। পথে প্রান্তরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে পড়েছিল কেবল লাশ আর লাশ। কত কুকুর, শিয়াল আর শকুন খেয়েছে সে লাশ তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সত্তরের সেই কালো রাতের কথা মনে হলে ধূসর স্মৃতিতে চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে বলে স্মৃতি রোমন্থন করেন ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক বাংলার কণ্ঠ সম্পাদক এম হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, সাপ আর মানুষ দৌলতখানের চৌকিঘাটে জড়িয়ে পড়ে আছে। স্নেহময়ী মা তার শিশুকে কোলে জড়িয়ে পড়ে আছে মেঘনার পাড়ে। সোনাপুরের একটি বাগানে গাছের ডালে এক মহিলার লাশ ঝুলছে। এমনিভাবে মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখানসহ সমগ্র জেলায় মানুষ আর গবাদি পশু বঙ্গোপসাগরের উত্তাল পানিতে ভেসে গেছে। জন-মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছিল দ্বীপজেলা ভোলা। সেই সময়কার প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভোলার সমস্ত জনপদকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল আর নদীতে গবাদি পশুসহ বনি আদম সন্তান সারিবদ্ধভাবে পড়েছিল। এসব সংবাদ তৎকালীন "পূর্বদেশ" পত্রিকার ভোলাস্থ প্রতিনিধি ও বর্তমান দৈনিক বাংলার কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক এম হাবিবুর রহমান প্রেরিত সচিত্র প্রতিবেদন "বাংলার মানুষ কাঁদো ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ" শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। আর এ সংবাদ বিশ্বব্যাপী চারদিন পর জানতে পেরেছিল। সেই চিত্রটি আজো ঢাকা প্রেস ইনস্টিটিউট-এ কালের সাক্ষী হিসেবে বাঁধানো অবস্থায় প্রদর্শিত হচ্ছে।