তিন জেলায় হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঠাটমারী বধ্যভূমি -যাযাদি
আজ ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নাগপাশ থেকে মুক্ত হয় ওই তিন এলাকা। দিবসটি পালন উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন,র্ যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে। স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: সুনামগঞ্জ: ৫ ডিসেম্বর রাতে সুনামগঞ্জকে শত্রম্নমুক্ত করতে বালাট সাব সেক্টরের কমান্ডার মেজর মোতালিব, ক্যাপ্টেন যাদব ও ক্যাপ্টেন রঘুনাথ ভাট বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে দখলদার বাহিনীর উপর চরম আঘাত হানতে চারটি কোম্পানি নিয়ে যৌথভাবে বিভক্ত হয়ে পরিকল্পিত আক্রমণে নামেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত ও যৌথ আক্রমণের খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্তিযোদ্ধাদের 'জয় বাংলা' সেস্নাগানে রাস্তায় নেমে এসে দামাল মুক্তিসেনাদের অভিনন্দন জানায় আপামর জনগণ। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর কয়েক হাজার নারী পুরুষ রাস্তায় নেমে এসে মুক্তির উলস্নাসে মেতে ওঠেন। এভাবেই শত্রম্নমুক্ত হয় সুনামগঞ্জ। মুক্তদিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ):সেদিন পূর্বাকাশের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে মুক্ত করেছিলেন নবীগঞ্জ। তিন দিনের সম্মুখযুদ্ধের পর সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ আগে নবীগঞ্জ থানা সদর হতে হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করে মুহুর্মুহু গুলি ও জয় বাংলা সেস্নাগানে বীরদর্পে এগিয়ে আসেন কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। এ সময় মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে থানা ভবনে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের পতাকা। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রম্নব ৪ ডিসেম্বর শহীদ হন এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে কোনো বাধা ছাড়াই মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে জয়বাংলা সেস্নাগানের মধ্য দিয়ে থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জকে মুক্ত ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও দিনটি নীরবে কেটে যায়। সরকারি-বেসরকারিভাবে কাউকে দিবসটি পালন করতে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার এত বছর পরও শহীদ ধ্রম্নবের সমাধিস্থল শনাক্ত করা হয়নি। রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): '৭১-র ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেত্বত্বে স্থানীয় গওহর পার্ক মাঠে এক বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে আহম্মদ আলী বকসী, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও মহির উদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে স্থানীয় কমান্ড গঠন করা হয়। তাদেরই নির্দেশে বিভিন্ন থানা থেকে গোলাবারুদ, অস্ত্র সংগ্রহ করে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম্মদ হোসেন সরকারের রাজারহাট উপজেলাধীন টগরাইহাট গ্রামের বাড়িতে অস্ত্র মজুদ করা হয়। এরপর ওই বাড়িতে স্থানীয় যুবক ও ছাত্রদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কলাকৌশল শেখানো হয়। পরবর্তীতে ওই বাড়ি থেকে প্রথমে পুলিশ-আনসার-ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের মাঝে অস্ত্র বিতরণ করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করা হয়। পাকবাহিনী দু'বার রাজারহাট আক্রমণ করে। অবশেষে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগ্রেডিয়ার যোশীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ মাউন্টেড ডিভিশনের সহযোগিতায় পাকবাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট মুক্ত করে।