মহাদেবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নওগাঁর মহাদেবপুরে খেঁজুর গাছ থেকে রস আহরণ করছেন এক গাছি -যাযাদি
মহাদেবপুর (নওগাঁ) সংবাদদাতা নওগাঁর মহাদেবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। কালের পরিক্রমায় প্রতি বছরই হাজির হয় শীত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে হাজির হয় এ ঋতু। তার মধ্যে অন্যতম খেজুর রস। শীতের শুরুতেই গ্রামের মানুষ খেজুর গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে ঝুলে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। খেজুর রস সংগ্রহ করে নতুন আমন ধানের পিঠা ভাপা-পুলি ও পায়েশ তৈরির ধুম পড়ে যেত গ্রামে গ্রামে। শীতের সকালে খেজুর রসে ভিজিয়ে মুড়ি না খেলে গ্রামগঞ্জের মানুষের যেন দিনটাই ভালোভাবে শুরু হতো না। সময় বয়ে চলার সঙ্গে রস-মুড়ি খাওয়ার সকালের সেই পারিবারিক আড্ডা বর্তমানে আর দেখা যায় না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। যে হারে গাছ কাটা হয়েছে সে হারে রোপণ করা হয়নি। যা আছে তাও সঠিকভাবে পরিচর্যা না করা এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতিবছর অসংখ্য গাছ মারা যাচ্ছে। তার উপর রয়েছে পেশাদার গাছির সংকট। হয়তো সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন খেজুর রসের কথা মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে। সচেতনদের মতে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পার্শ্বে, পরিত্যক্ত স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর গাছ রোপণ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেজুর গাছের রস ও গুড় সম্পর্কে কোনো গল্পকথা বলতে হবে না। উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের গাছি ছামাদ বলেন, 'শীত মৌসুম এলে গাছ ছাঁটাই করে রস বিক্রির টাকায় ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতেন। আগে প্রতি বছর শীত মৌসুমে নিজের গাছ ছাড়াও নির্ধারিত অর্থ বা গুড় দেয়ার চুক্তিতে অন্যের ১০-১৫টি গাছ কাটতেন। কিন্তু এখন গাছ মরে যাওয়া এবং গাছ বিক্রির কারণে মাত্র একটি গাছ কাটেন।' উপজেলার সফাপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন নামে এক প্রবীণ বলেন, 'এক সময় এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে ও পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। গাছের সংখ্যা কমতে কমতে বিলুপ্ত প্রায়।'