ঢাকা-বরিশাল নৌরুট

নাব্যতা সংকটে বিকল্প পথে যাচ্ছে লঞ্চ

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

বরিশাল অফিস
বরিশাল-ঢাকা নৌপথে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে। বিশেষ করে মিয়ারচর এলাকায় এই সংকট তীব্র হয়েছে। তাই দেড়ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় নিয়ে কালিগঞ্জ হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে ওই নৌপথে চলাচলরত নৌযানগুলো। এতে করে যেমন সময়ের সঙ্গে বাড়ছে জ্বালানি খরচ, তেমনি যাত্রীদেরও গন্তব্যে যেতে সময় লাগছে বেশি। লঞ্চ কতৃর্পক্ষ ও বরিশাল বিআইডবিøউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নিধাির্রত নৌপথের দূরত্ব ১৫৪ নটির্ক্যাল মাইল বা ২৭৫ কিলোমিটার। এ রুট দিয়ে চলাচলরত নৌযানকে মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ হয়ে মেঘনায় নদী পাড়ি দিতে হয়। তবে বরিশালের হিজলার মিয়ারচর থেকে নৌযানগুলো চলাচল করলে প্রায় ১০ কিলোমিটার নৌপথ কমে যায় ও সময় বেঁচে যায় এক থেকে দেড়ঘণ্টা। বিআইডবিøউটিএর বৈধ রুট না হলেও দীঘির্দন ধরে লঞ্চ মালিক ও চালকরা মিয়ারচর হয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে তাদের নৌযান চালনা করে আসছেন। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৫ নটির্ক্যাল মাইল বা ২৬২ কিলোমিটার। কিন্তু মিয়ারচরের একটি বিশাল এলাকাজুড়ে কিছুদিন পরপর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। আর সেই এলাকাজুড়ে কোটি টাকা খরচ করে প্রতিনিয়িত ড্রেজিংও করে আসছে বিআইডবিøউটিএ। স¤প্রতি ওই এলাকায় একটি বাল্কহেড ডুবে যাওয়ায় মিয়ারচর এলাকার চ্যানেল সরু হয়ে যায়। ফলে সেখান থেকে লঞ্চ চালনা ঝুঁকিপূণর্ হয়ে দাঁড়ালে গত ৬ আগস্ট থেকে মিয়ারচর হয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এ মমের্ সম্প্রতি নদী বন্দরগুলো থেকে চালকদের প্রতি কড়া নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। প্রকৌশল ও নৌ-নিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানা গেছে, মিয়ারচরে নদীতে পানির চাপ বেশ কয়েকটি দিক থেকে আসায় সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিনিয়ত পলি ও বালু জমে। অনেক সময় এমনও হয় ওইখানে নিদির্ষ্ট পথ ধরে ড্রেজিং করার সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবারো পলি পড়ে যাচ্ছে। লঞ্চ কতৃর্পক্ষের কারণে এটি ঢাকা-বরিশালের নিদির্ষ্ট রুট না হলেও সময় ও খরচ বাঁচাতে নদী পথটি দীঘির্দন ধরে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে লঞ্চের মাস্টাররা জানান, ওইপথ দিয়ে লঞ্চ চালনা করলে সময়ের সাথে তেল খরচও কমতো। তবে এখন বিআইডবিøউটিএর নিদের্শনার কারণে দেড়ঘণ্টা সময় অতিরিক্ত পথ লঞ্চ চালিয়ে কালীগঞ্জ ঘুরে যেতে হয়। কালীগঞ্জের অনেক এলাকায় ডুবোচর রয়েছে। আবার বৃহত্তর মেঘনায়ও ডুবোচর রয়েছে যা স্বাভাবিক লঞ্চ চালনাকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে। পারাবত-১২ লঞ্চের মাস্টার আবুল কালাম জানান, আধুনিক সরঞ্জাম যেমন, রাডার, ভিএইচএফ, জিপিএস, ইকোসাউন্ডার যাদের রয়েছে তাদের বরিশাল-ঢাকা রুটে নৌযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। ডুবোচর, পানি কম এগুলো মেপেই যাওয়া যায়। তবে পুরাতন লঞ্চগুলো যাদের এগুলো নেই তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। আর আগে থেকেই বড় আকারের নৌযান, যাদের বেশি পানির প্রয়োজন তাদের মিয়ারচর থেকে যেতেও বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে ছোট লঞ্চগুলো সেখান থেকে অনায়াসে চলে যেতে পারতো। বতর্মানে ঢাকার সদরঘাট থেকে মিয়ারচর হয়ে সব ধরনের লঞ্চ চালনাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি যদি সেখান থেকে কোনো লঞ্চ যায় কিংবা সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় চরে আটকে পড়ে অথবা কোনো ধরনের দুঘর্টনার স্বীকার হয় তবে সেই লঞ্চ ও লঞ্চের মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বরিশাল বিআইডবিøউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, মিয়ারচরে এমনিতেই নাব্য সংকট, তার ওপর কয়েকদিন আগে একটি বাল্কহেড ডুবেছে। এর কারণে নৌপথটি ঝুঁকিপূণর্ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই কালীগঞ্জ থেকে লঞ্চগুলো ঘুরে যেতে বলা হয়েছে। এ নিদের্শনা যারা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।