মন ছুটে যায় ঘোড়দৌড়ে

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

এস আর এ হান্নান, মহম্মদপুর (মাগুরা)
বিলের বিশাল মাঠজুড়ে হাজার হাজার মানুষ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে জনসভাস্থল অথবা অন্য কোনো জমজমাট আয়োজনে সমবেত হয়েছেন অগণিত মানুষ। কিন্তু সেরকমটা কিছুই নয়। খুলানাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এবং প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীণতম ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় উপভোগ করতেই হাজার হাজার দর্শক জমায়েত হয়েছেন সেখানে। রোববার বিকালে মাগুরার মহম্মদপুরের বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া গ্রামের কানাবিলে অনুষ্ঠিত হয় এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। ঐতিহ্যবাহী ও মনোমুগ্ধকর এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে কানাবিলে মানুষের ঢল নামে। অন্যরকম উৎসবমুখতায় মেতে ওঠেন হাজার হাজার আমুদে দর্শক। নানান এলাকা থেকে বিভিন্ন পথে লোকজন এসে জড়ো হয়েছেন। শিশু-কিশোর, ছেলে-বুড়ো ও নারীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ অভিন্ন উদ্দেশ্যে এক কাতারে শামিল হয়েছেন। সবারই উদ্দেশ্য গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় উপভোগ করা। এ দিন দুপুরের পর এমন চিত্রই দেখা গেছে। প্রতি বছর বাংলা ২৮ পৌষ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা এবং এ উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে। ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটা ছুঁইছুঁই। একে একে ২৩টি ঘোড়ার উপস্থিতি চোখে পড়ল। আগে থেকেই ঘোড়দৌড়ের নির্দিষ্ট বৃত্তাকৃতির পথপরিক্রমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘোড়দৌড়ের এই পথে ঘোড়া মালিক, ফকির ও ছোয়াররা (জকি) ঘোড়াকে তার পথপরিক্রমায় প্রাথমিক মহড়ায় ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। আড়াইটার পর পরই শুরু হয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। ছোয়ারের বাঁশির ছন্দময় আওয়াজে ঘোড়া ছুটে চলে দুর্বার গতিতে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তা ও বিলের বিশাল প্রান্তরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন ঘোড়দৌড়। শীতের বিকালে মিষ্টি রৌদ্দুরে এক অন্যরকম উৎসব আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। প্রতিযোগিতায় মহম্মদপুরের মাইজপাড়া গ্রামের সোবহান সরদারের প্রথম স্থান দখল করে জিতে নেয় নগদ ৫ হাজার টাকা। একই উপজেলার পালস্না গ্রামের আবদুল কুদ্দুস এবং নাওভাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমানরে ঘোড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করে জিতে নেয় ৩ হাজার ও ২ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অন্য ২০টি ঘোড়ামালিকের প্রত্যেককে এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। রাতে মেলার কমিটি বক্সের সামনে থেকে ওই পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রাচীনতম এ মেলাকে ঘিরে শুধু বড়রিয়া নয়-উৎসব আনন্দে মাতেন আশপাশের অন্তত ৫০ গ্রামের মানুষ। মেলার মূল আকর্ষণ অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় গত রোববার অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও মেলা থাকবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ। মেলা উপলক্ষে ঘরে ঘরে চলে পিঠাপায়েস তৈরিসহ নানান আয়োজন। প্রতি বাড়িতেই আত্মীয়স্বজন আসেন। সবার মধ্যেই বিরাজ করে খুশির হিলেস্নাল।