কালের সাক্ষী ছুরুত বিবি মসজিদ

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ছুরুত বিবি মসজিদ -যাযাদি
চট্টগ্রামের আনোয়ারা বারখাইনের শোলকাটা গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ছুরুত বিবি মসজিদ। সতেরশ শতকের এই মসজিদকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক কথা প্রচারিত আছে। মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে বিশাল দুটি দীঘি। দক্ষিণের দীঘিটি ছুরুত বিবি দীঘি আর পশ্চিমের দীঘিটি আমীর খাঁ দীঘি নামে পরিচিত। আর আমীর খাঁ দীঘির দক্ষিণে শেখ রাজার বসতভিটা নামে পরিচিত একটি বসতভিটা রয়েছে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সংগৃহীত জনশ্রম্নতিতে জানা যায়, ১৫৭৫ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলে রাজ্যের সেনাপতি শেখ মোহাম্মদ আদম গৌড়ী গৌড়রাজ্য ত্যাগ করে শোলকাটা গ্রামে সপরিবারে বসতি স্থাপন করেন। এ বংশের একজন জমিদার ছিলেন শেখ আমির মুহাম্মদ চৌধুরী। ১০৫১ মঘী সনের এক 'একরারনামা' মূলে জানা যায় আমীর মুহাম্মদ চৌধুরীর ওপর জমিদারির ভার ছিল। ইতিহাস গবেষক জামাল উদ্দিনের 'দেয়াঙ পরগনার ইতিহাস' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আরাকান রাজসভার মহাকবি আলাওলের দ্বিতীয় কন্যা ছুরুত বিবির বিয়ে হয় দেয়াঙ পরগণার মোগল অংশের দেওয়ান পরিবারের এক জমিদার বাড়ির ছেলে দেওয়ান আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর সাথে। মহাকবি আলাওলের দুই কন্যার মধ্যে ছুরুত বিবি ওরফে শুক্কুর বিবি ছিলেন তার দ্বিতীয় কন্যা। বিয়ের পর আমীর মুহাম্মদ চৌধুরী স্ত্রীর নামেই এ ছুরুত বিবি মসজিদ নির্মাণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে মোগল শাসনামলে (১৭১৩-১৭১৮) এ মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদের মোতাওয়ালিস্ন ও কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম (৫১) বলেন, আমার পূর্বপুরুষেরা ধারাবাহিকভাবে বংশে একজন করে এ মসজিদের মোতাওয়ালিস্নর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলিলপত্রাদি সূত্রে বংশ পরম্পরায় আমি ৫ম মোতাওয়ালিস্ন। ১৯৮৮ সালে আমার বাবা নুরুল আলম মারা যাওয়ার পর আমি এ দায়িত্ব পাই। তিনি আরো জানান, এক সময় এ মসজিদে শুধু জোহর আর আসরের নামাজই পড়তেন লোকজন। প্রচার ছিল এখানে জিনেরা নামাজ পড়ত, তাই সন্ধ্যা হলে এখানে ভয়ে কোনো মানুষ আসত না। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখানে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন স্থানীয়রা। ছুরুত বিবির মসজিদের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে সারি সারি ১২টি কবর। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ছুরত বিবির বিবাহের বছর দেড়েক পর ঘর আলো করে আসে দুই ছেলে জাফর খাঁ আর মুজাফফর খাঁ। দেওয়ান পরিবার খুবই প্রজাবৎসল শাসক ছিল। তাই এদের সুনাম ছিল দেশব্যাপী এমনকি দেশ ছাড়িয়ে দিলিস্নর মসনদ পর্যন্ত।