মিয়ানমার সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

আব্দুল হামিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি
সীমান্তে মায়ানমার সেনাদের টহল
বাংলাদেশ সীমান্তে হঠাৎ করেই সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করছে মিয়ানমার সরকার। গত কয়েকদিন ধরেই পাবর্ত্য জেলা বান্দরবানের রুমা থেকে শুরু করে টেকনাফ পযর্ন্ত সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ভারী অস্ত্রসহ নতুন করে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে মিয়ানমার । বান্দরবানের থানচি ও আলীকদম সীমান্ত, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রæ, চাকঢালা, আশারতলি, ফুলতলী ও দোছড়ি সীমান্তে সেনাসদস্য ছাড়াও সীমান্ত পুলিশ বিজিপির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের এক বছর পূতির্ হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ আগস্ট। এ সময় মায়ানমারে প্রতিশোধমূলক হামলা হতে পারেÑএমন আশঙ্কায় সীমান্তে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা ও টহল বাড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রæ সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবিরের পাশেও সেনা সংখ্যা এবং টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সীমান্তে হঠাৎ করে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর কারণে জিরো লাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বডার্র গাডর্ বাংলাদেশ-বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কনের্ল আব্দুল খালেক জানান, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা জুড়েই হাঠাৎ করে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাদের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। তাদের কাছে যে খবর রয়েছে, তাতে আগামী ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসা নতুন করে হামলা করতে পারে এমন খবর মায়ানমারের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি জানান, এরই সূত্র ধরে মিয়ানমার হয়তো সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবিও সতকর্ অবস্থায় থেকে নিরাপত্তা জোরদার করছে। কিছু কিছু জায়গায় বিজিবির সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে উত্তেজনা নেই বলে বিজিবির এ কমর্কতার্ জানিয়েছেন। এদিকে বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কনের্ল ইকবাল হোসেন জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে হঠাৎ করে মায়ানমারের সেনা সংখ্যা বৃদ্ধিতে সীমান্তে সতকর্ নজর রাখা হচ্ছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর এ পযর্ন্ত পাওয়া যায়নি। সীমান্তের পয়েন্টগুলোতে বিজিবি সদস্যরা টহল বাড়িয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দুল আজিজ জানান, গত দুই দিন থেকে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও টহল বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাদের ওপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে নো-ম্যান্স ল্যান্ডের অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গারা জানান, আগামী ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় নতুন করে হামলা হতে পারেÑএমন মিথ্যা গুজব ছড়ানো হয়েছে মিয়ানমারে। তারা বলেন, দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যম এই মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা। এতে কমপক্ষে ২৪ হাজার রোহিঙ্গা নিহত ও ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নারী ধষির্ত হন। এছাড়াও পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন প্রায় ১১ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা।