হারাগাছে বেকার আতঙ্কে বিড়ি শ্রমিক

প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রংপুরের হারাগাছের প্রায় তিন শতাধিক বিড়ি তৈরির কারাখানা। এতে করে প্রায় দুই লক্ষাধিক বিড়ি তৈরির শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। জানা গেছে, উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা, সারাই, হারাগাছ মর্নেয়া, মৌভাষা এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক বিড়ি তৈরি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিদিন অন্তত দুই লক্ষাধিক দিনমজুর নারী-পুরুষ শ্রমিক বিড়ি তৈরির কাজ করেন। এতে যে কয় টাকা মজুরি পান তা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। আর প্রতিটি বিড়ি কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক একত্র হয়ে বিড়ি কাজ করে থাকেন। কিন্তু সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আক্রমণ করছে। আর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা জারি করায় বিড়ি তৈরির কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিক নেতা জানান, কারখানাগুলোতে অন্তত দুই লক্ষাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা চালান। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে পড়লে এসব দিনমজুর শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়বেন। ফলে শ্রমিকদের ঘরে খাবার থাকবে না। গফুরটারী মধ্যপাড়া গ্রামের দিনমজুর নারী শ্রমিক রাহিলা বেওয়া (৫৫) বলেন, শুনেছেন কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বিড়ি বানালে হাঁড়িতে চাল ওঠে। বিড়ির কাজ বন্ধ হলে হাঁড়ির চাল ওঠে না। কয়েকদিন থেকে বিড়ি তৈরির কাজ কমে যাওয়ায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে কষ্টে আছেন। তার ওপর জ্বর, সর্দির ভয়ে বাড়ি থেকে কাজে যেতে পারছেন না। কাজ বন্ধ হলে কী খাবেন এ চিন্তায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। একই কথা বললেন মুন্সিপাড়া গ্রামের দিনমজুর আকমল হোসেন (৩৮), সেলিনা বেগমসহ একাধিক দিনমজুর। এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশা, অটোবাইক চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের দিন যাপনে নেমে এসেছে চরম দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা। করনাভাইরাস আতঙ্কে হাট-বাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় এদের অনেকের দৈনিক আয় অর্ধেকেরও নিচে আবার অনেকের আয় প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। একদিকে আয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে এরা প্রতিটি দিন অতিক্রম করছেন এক অজানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে। উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, হারাগাছে বিড়ি কারখানা ছাড়া অন্য কোনো কলকারখানা নেই। এখানকার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই বিড়ি তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্ভর করে থাকেন। বিড়ি কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন দিনমজুর মানুষগুলো। \হমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা তাদের জমাকৃত টাকা থেকে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারলেও খেটে খাওয়া পরিবারে দেখা দিবে দুর্ভিক্ষ। তিনি বলেন, এই দুর্যোগকালীন মুহূর্তে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সরকারের বিশেষ রেশনের ব্যবস্থা করা ও সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাহলে এসব খেটে খাওয়া মানুষের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কম হবে।