করোনায় স্বপ্ন ভাঙল ফুলচাষিদের

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
করোনাভাইরাসের ছোবলে স্বপ্ন ভাঙল যশোরের গদখালীর ফুলচাষিদের। তাদের মাঠের ফুল মাঠেই পচে যাচ্ছে। কেটে খাওয়াতে হচ্ছে গরু-ছাগলকে। ভরা মৌসুমে এমন দশায় শত কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত উঠেছে এ অঞ্চলের ৫ সহস্রাধিক ফুলচাষির। দেশের ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালী। এখানেই ফুল বেচাকেনার জন্য গড়ে উঠেছে বড় পাইকারি বাজার। প্রতিদিন পূর্ব আকাশে লাল সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠতো ফুলের বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররা ফুল কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুলের রং ছড়িয়ে দিতেন বিভিন্ন বয়সী মানুষের মনে। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে ঘটেছে ছন্দপতন। করোনার প্রাদুর্ভাবে গদখালীর ফুলের বাজার মানবশূন্য। ফুল বেচাকেনা বন্ধ থাকায় চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। যশোরের গদখালী বাজার ও স্থানীয় মাঠ ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। পানিসারা এলাকার ফুলচাষি শের আলী জানান, আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে ফুল উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কয়েক লাখ টাকা গোলাপ বাগানে বিনিয়োগ করা আছে। ঠিক সেই সময়ে করোনাভাইরাসের দুর্যোগের কারণে ১২ দিন ধরে পরিবহণ-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফুলের বাজার বসছে না। খেত থেকে প্রতিদিনই দেড় হাজারের বেশি গোলাপ ফুল কেটে ছাগল গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। ফুল না কাটলে নতুন করে আর কুঁড়ি আসে না। অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। তিনি আরও বলেন, আমার মতো এই এলাকার হাজারও ফুলচাষি এমন বিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের রজনীগন্ধা, গস্নাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। গদখালী এলাকার কৃষক শাহজাহান জানান, এবার তার আড়াই বিঘা জমির গোলাপ ফুলের খেত ছাগলের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১২ দিন ধরে ফুলের বেচাকেনা নেই। এদিকে বাগান থেকে প্রতিদিনই দেড় থেকে দুই হাজার গোলাপ কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। কারণ গোলাপ না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই। অন্যদিকে ফুল কাটার জন্যে শ্রমিক খরচ হচ্ছে। প্রতিদিনই শাহজাহানের দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটির সূত্রমতে, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুলের উৎপাদন হয়েছিল। ছাড়িয়েছিল দামও। দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালী বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেচাকেনা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। কিন্তু করোনাভাইরাসে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটির। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গদখালীর পাইকারি ফুলের বাজার ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার খেতে ফুল রাখতেও পারছে না। এরকম উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে যশোর অঞ্চলে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনই কৃষকদের খাদ্য সরবরাহ ও বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।