টাঙ্গাইলে লক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক কর্মহীন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মু. জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি লকডাউনের ঘোষণায় টাঙ্গাইল জেলার এক লাখ তিন হাজার ২০৬ জন তাঁত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। এ ছাড়া চার হাজার ১৫১ জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিকও করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকায় খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এর মধ্যে মাত্র আড়াইশ শ্রমিককে সরকারি ত্রাণের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাঁত বোর্ড নিয়ন্ত্রিত জেলার দুটি বেসিক সেন্টার সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলায় তাঁত শিল্প ও তাঁতিদের উন্নয়নের জন্য দুটি বেসিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে কালিহাতী, ভূঞাপুর, ঘাটাইল, গোপালপুর, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার জন্য কালিহাতীর বলস্নায় একটি এবং সদর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, বাসাইল, সখীপুর, মির্জাপুর উপজেলার জন্য টাঙ্গাইল শহরের বাজিতপুরে একটি। দুটি বেসিক সেন্টার থেকে তাঁতিদের মাঝে বিতরণকৃত ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁত বোর্ডের চলতি মূলধন সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে ৬৪জন তাঁতিকে মার্চে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, টাঙ্গাইলের তাঁতিদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা। গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে জেলার সকল তাঁত ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে এক লাখ তিন হাজার ২০৬ জন তাঁত শ্রমিক এবং চার হাজার ১৫১ জন ক্ষুদ্র তাঁত মালিক বেকার হয়ে পড়েন। বেকার হওয়া তাঁত শ্রমিকদের প্রায় অর্ধাংশ বাড়িতে চলে গেছেন। রয়ে যাওয়া শ্রমিকরা বাড়িতে অবস্থান করে সরকারি নির্দেশনা পালন করছেন। তাদের ঘরে এক সপ্তাহের খাবার থাকলেও তা শেষ হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ তাঁত শ্রমিক একবেলা-দু'বেলা আধপেটা খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। কালিহাতী উপজেলার বলস্না ১নং প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সভাপতি দুলাল হোসেন জানান, তার সমিতির সদস্য তিন হাজার ১০ জন। দুই সপ্তাহ ধরে সকল তাঁত বন্ধ। তাঁতিদের প্রতি তাঁতে সপ্তাহে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় চার হাজার টাকা। এ অবস্থা বেশিদিন চললে তাঁতিদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাঁত শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে থাকলেও তাঁত বোর্ডের বেসিক সেন্টার থেকে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। তাঁত শ্রমিকরা ত্রাণ সহায়তার জন্য হাহাকার করছে। বলস্না ইউপি চেয়ারম্যান চান মাহমুদ পাকির জানান, উপজেলা থেকে কোটা অনুযায়ী সরকারি ত্রাণ সহায়তা ইউনিয়ন পরিষদে আসে। সেখান থেকেও তিনি কিছু তাঁত শ্রমিকের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। তাঁত বোর্ডের বেসিক সেন্টার মাত্র ১৯ জন তাঁত শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেলদুয়ারের আটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম মলিস্নক জানান, সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ইউনিয়নের ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতিত কর্মহীন শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁত শ্রমিকরাও যথারীতি সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে। টাঙ্গাইল সদর বেসিক সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, কর্মহীন হয়ে পড়া তাঁত শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে কোন সরকারি ত্রাণ সহায়তা আসেনি। দেলদুয়ার ও সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় দেড়শ তাঁত শ্রমিককে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।